ঈদগাহে ছেলের সঙ্গে বাবার শৈশব

রংপুর, জাতীয়

ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 11:58:39

 

রংপুর: ছোট্ট শিশু নিহান। বয়স তিন ছুঁই ছুঁই। খয়েরি রঙের নতুন পাঞ্জাবি-পাজামা পড়ে বাবার হাতে ধরে ঈদগাহে এসেছে। নামাজ পড়েছে বাবার সঙ্গে। নিহানের বাবা আতিকুল যখন ছেলের হাত ধরে ঈদগাহের মধ্যে, তখন তার চোখে ভেসে উঠেছে ফেলা আসা শৈশবের স্মৃতি।

একটা সময় তিনিও তার বাবার হাত ধরে ঈদগাহে যেতেন। নামাজ পড়তেন বাবার পাশে দাঁড়িয়েই। আজ তার বাবা বেঁচে নেই। তাই ঈদগাহের ভেতরে শিশু নিহানের মাঝে নিজের ফেলে আসা শৈশবকে খুঁজছিলেন। বারবার নিহানের মুখের দিকে তাকিয়ে অশ্রুসিক্ত আতিকুল তার বাবার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্মৃতিগুলোকে মনে করছিলেন।

রংপুর পুলিশ লাইন ঈদগাহ মাঠে সকাল পৌনে আটটার দিকে কথা হয় নগরীর হনুমান তলা এলাকার বাসিন্দা আতিকুল ইসলামের সঙ্গে। এ সময় তিনি তার ছোট্ট ছেলে নিহানকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন।

আতিকুল বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে বাবাকে হারিয়েছি। মা বেঁচে নেই। ঈদ এলেই মা-বাবার আদর ভালোবাসার কথা খুব বেশি মনে পড়ে। ঈদের দিনটা সন্তানের মাঝেই হারানো মা-বাবাকে খুঁজে পাই। আমিও বাবার সঙ্গে ঈদগাহে আসতাম। কখনো কখনো জামাত শুরু হওয়ার পর ছোটাছুটি করতাম। এখন আমার ছেলে নিহানও তাই করে।’

আতিকুল ইসলামের মতো নুর হোসেনও পুলিশ লাইন ঈদগাহে তার ছেলে জাহিদকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। বাবা-ছেলের ঈদগাহে আসার স্টাইলটাই ছিল একটু ভিন্ন। বাবা পাঞ্জাবি লুঙ্গি পড়েছে। আর ছেলের পরনে প্যান্ট-শার্ট। নামাজ শুরুর আগে জায়নামাজ বিছিয়ে মাঠে বসেন বাবা-ছেলে। জিহাদের বয়স তিন পেরিয়েছে। নুর হোসেন ছেলেকে তার মতো করেই নামাজ পড়ার কথা বলছিলেন। এমন সময় তার সঙ্গে কথা হয় বার্তা২৪.কমের।

নুর হোসেন বলেন, ‘আমার বাবাও একটা সময় আমাকে এইভাবে নামাজ পড়তে বলতেন। তখন আমি ছোট ছিলাম। এখন আমি বাবা হয়েছি। কিন্তু আমার বাবা আজ বেঁচে নেই। তাই ছেলের মাঝে বাবাকে খুঁজি। বাবাকে হারানোর শূন্যতা কখনো পূরণ হবে না। কিন্তু ঈদে বাবার সঙ্গে মিশে থাকা শৈশবের স্মৃতিগুলোকে ছেলের মধ্যে খুঁজে পাই।‘

ঈদগাহে এমন অসংখ্য বাবা এসেছিলেন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে। নামাজ শেষে মোনাজাতে সেই বাবারা সবচেয়ে বেশি অশ্রু ফেলেছেন হারানো বাবার জন্য। আজকে বাবার হাত ধরে আসা ছেলেরাও হয়তো বাবা হলে একদিন এভাবেই কাঁদবে তার বাবার জন্য।

এ সম্পর্কিত আরও খবর