ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ‘জীবনে কোনোদিন কোরবানি দেয়া হয়নি। কোরবানি দেয়ার সাধ্য নেই আমার। কোনো ভাবে খেয়ে পরে বেঁচে আছি। তবে মনে অনেক ইচ্ছা, একদিন কোরবানি দিব।’
অনেক আক্ষেপ করে বার্তা২৪.কমকে কথাগুলো বলছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার সোনারামপুরের বি বি ফুড ইন্ডাস্ট্রিজে কর্মরত চাতালকন্যা সাবিনা বেগম।
সাবিনা বেগম জানান, গত ১১ বছর ধরে তিনি চাতালকলে কাজ করছেন। এর মধ্যে ঈদে মাত্র ২ বার বাড়িতে গিয়েছেন। ঈদ আসলেই তার মনে কোরবানি দেয়ার ইচ্ছা জাগে। কিন্তু আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় কোরবানি দিতে পারেন না। তবে একদিন কোরবানি দেবেন বলে আশায় বুক বেঁধেছেন।
একই ফুড ইন্ডাস্ট্রিজে সাবিনা বেগমের মতো চাতালকলে কাজ করেন আনোয়ার, জামাল, ওসমান, আসমা, শাপলা, মিতু ও আনোয়ারা বেগম। তারাও কখনো কোরবানি দেননি। শুধু কোরবানির ঈদে নয়, যেকোনো উৎসবে তারা এতো আনন্দ বা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে পারেন না।
তারা জানান, উৎসবের দিনগুলোতে ছেলে মেয়ের মুখে হাসি ফোটানোর সাধ্য তাদের নাই। যে টাকা তারা বেতন পান এতে করে কোনো রকমে চলে তাদের সংসার। তাই ইচ্ছে করলেও অনেক কিছুই করতে পারেন না তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮০ সালের প্রথম দিকে জেলার আশুগঞ্জে চাতাল কলের গোড়াপত্তন শুরু হয়। ধীরে ধীরে সড়ক পথ, রেলপথ ও নৌপথে যোগাযোগ সহজ ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার কারণে এখানে এ শিল্পের দ্রুত প্রসার ঘটে। এছাড়াও এখানে দেশের অন্যতম বৃহত্তম আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও গ্যাসের সহজ সরবরাহের কারণে চাতাল কল স্থাপন দিনে দিনে বৃদ্ধি পেতে থাকে। দেশের পূর্বাঞ্চলীয় বৃহত্তর ধান ও চাউলের মোকাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক চাতালকল। আর এখানে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ২০ সহস্রাধিক নারী ও পুরুষ শ্রমিক।
আরও জানা গেছে, নারী শ্রমিক বা চাতালকন্যারা প্রতিদিন মজুরি পান ৬০ টাকা ও পুরুষ শ্রমিকরা পান ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে। প্রতিকূল আবহাওয়াতে এই টাকা আরও কমে যায়। এতে করে কোনো ভাবে চলে তাদের জীবন।
এ বিষয়ে ফাইভ স্টার অটো রাইস মিলের শ্রমিক ওসমান গনি বলেন, ‘আগে মালিকরা ছুটি দিত না। এখন ঈদে ছুটি পাই। পাশাপাশি মালিকরাও কোরবানির ঈদে আমাদের জন্য একটি গরু দেয়। ঈদের দিন আমরা সকলে মিলে সেই গরু জবাই করে ভাগ করে নেই। তবে নিজেরা কখনো কোরবানি দেয়নি।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া চাতালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘চাতালে কর্মরত শ্রমিকদের আমরা বিভিন্ন উৎসবে আর্থিক সহায়তা করে থাকি। পাশাপাশি দুই ঈদেও তাদের অন্তত দুইদিন করে বন্ধের ব্যবস্থা রয়েছে। শ্রমিকদের অনেক সমস্যা রয়েছে। তাদের বেতন ভাতাসহ সকল বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।’