ডিএনসিসির ৬৭ ভাগ স্থাপনায় এডিস বিস্তারের উপযোগী পরিবেশ

, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-28 08:32:23

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নগরবাসীকে ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা দিতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী বছরব্যাপী সর্বাত্মক মশা নিধন কার্যক্রমের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

এরই অংশ হিসেবে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানের (চিরুনি অভিযান) সিদ্ধান্ত হয়। প্রথম পর্যায়ের (৬-১৫ জুন) ১০ দিনব্যাপী চিরুনি অভিযানের শেষ দিন ছিল সোমবার (১৫ জুন)।

সোমবার মোট ১৩ হাজার ৩৬৮টি বাড়ি, স্থাপনা ও নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করে ১৬০টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ৯ হাজার ৩৫টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১৯টি মামলায় মোট ৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও এডিসের লার্ভা পাওয়ায় অন্যান্য বাড়ি ও স্থাপনার মালিককে সতর্ক করা হয়েছে।

ডেঙ্গুরোধে চিরুনি অভিযানে অংশ নেন ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা, ছবি: বার্তা২৪.কম

গত ৬ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডের মোট ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৩৫টি বাড়ি, স্থাপনা ও নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করে মোট ১ হাজার ৬০১টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ৮৯ হাজার ৬২৬টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। অর্থাৎ অভিযানে দেখা যায়, ডিএনসিসির শতকরা প্রায় ৬৭ ভাগ স্থাপনায় এডিসের বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ বিরাজমান এবং শতকরা প্রায় ১.২ ভাগ স্থাপনায় এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়।

ডেঙ্গুরোধে চিরুনি অভিযান চালিয়েছে ডিএনসিসি, ছবি: বার্তা২৪.কম

এ অভিযান থেকে বোঝা যাচ্ছে, নগরবাসীর অনেকের মধ্যে নির্মাণাধীন ভবন, বাড়ি ও স্থাপনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে আরো সচেতনতা প্রয়োজন। এডিস মশার লার্ভা পাওয়ার অপরাধে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ অনুযায়ী এ ১০ দিনে মোট ২৪ লাখ ১০ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। পরে একই অপরাধে কেউ অভিযুক্ত হলে আরও কঠোর শাস্তি, এমনকি জেল পর্যন্ত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, আগামী মাসেই ডিএনসিসির চিরুনি অভিযানের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হবে।

এবারের চিরুনি অভিযানের অন্যতম সংযোজন ছিল অ্যাপের মাধ্যমে ডাটা সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা শুরু করা। চিরুনি অভিযান চলাকালে যেসব বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা কিংবা এডিস মশা বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ পাওয়া গেছে, তার ছবি, ঠিকানা, মোবাইল ফোন নম্বরসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে একটি বিশেষ অ্যাপে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ফলে চিরুনি অভিযান শেষে ডিএনসিসির কোন কোন এলাকায় এডিস মশা বংশবিস্তার করে, তার একটি ডাটাবেজ তৈরি হবে। ডাটাবেজ অনুযায়ী পরের ধাপে তাদের মনিটর করা সহজ হবে।

ডেঙ্গুরোধে চিরুনি অভিযান চালিয়েছে ডিএনসিসি, ছবি: বার্তা২৪.কম

প্রথম ধাপে অভিযান পরিচালনার উদ্দেশে প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০টি সেক্টরে ভাগ করে প্রতিটি সেক্টরকে ১০টি সাবসেক্টরে ভাগ করা হয়। প্রতিদিন প্রতিটি ওয়ার্ডের ১টি সেক্টরে অর্থাৎ ১০টি সাবসেক্টরে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। প্রতিটি সাবসেক্টরে ৪ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ১ জন মশক নিধনকর্মীর সমন্বয়ে গঠিত টিম অর্থাৎ প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ৪০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ১০ জন মশককর্মী বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কোথাও এডিস মশার লার্ভা আছে কিনা, কোথাও তিনদিনের বেশি পানি জমে আছে কিনা, ময়লা-আবর্জনা আছে কিনা, যা এডিস মশার বংশবিস্তারে সহায়ক, সেটি পরিদর্শন করে সেসব স্থানে লার্ভা ধবংস করে কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন। এ চিরুনি অভিযানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ৯ জন কীটতত্ববিদ, ডিএনসিসির ৩ জন কীটতত্ববিদ, স্বাস্থ্য বিভাগ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তারা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছেন।

ডেঙ্গুরোধে চিরুনি অভিযান চালিয়েছে ডিএনসিসি, ছবি: বার্তা২৪.কম

ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম পর্যায়ের অভিযানের সফল সমাপ্তিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, করোনার ভয়কে জয় করে এ চিরুনি অভিযান সফল করতে আমাদের ওয়ার্ড কাউন্সিলররা, ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এবং গণমাধ্যমকর্মীরা সাহসী ভূমিকা রেখেছেন। যা সর্বমহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। আগামী মাসে আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ে চিরুনি অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা করেছি। আশা করি, তখনও আপনাদের এভাবেই পাশে পাব।

এ সম্পর্কিত আরও খবর