সংক্রামক বর্জ্য সংগ্রহে বাড়ি বাড়ি জি-ব্যাগ দেবে ডিএনসিসি

, জাতীয়

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-23 08:19:41

করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে একবার ব্যবহার্য মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, পিপিই ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার বেড়ে গেছে। আর ব্যবহারের পর এগুলো ফেলা হচ্ছে গৃহস্থালীর সাধারণ বর্জ্যের মধ্যে। এতে বর্জ্য সংগ্রহকারী থেকে শুরু করে অন্যান্যদের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা যেমন সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি তা পরিবেশের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

দেশে ব্যবহৃত মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস এবং পিপিই অধিকাংশই অপচনশীল দ্রব্য দিয়ে তৈরি, তাই এগুলো সঠিক পদ্ধতিতে ধ্বংস করা না গেলে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। পাশাপাশি এর মাধ্যমে প্রচণ্ড সংক্রামক ভাইরাসটি সবার মাঝে ছড়িয়ে যেতে পারে।

পরিবেশবিদরা বলছেন, এসব ব্যবহৃত মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস ও পিপিই উৎস থেকে পৃথক করতে না পারলে আমাদের চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি পরিবেশের স্থায়ীভাবে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য যেভাবে হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক ও পিপিই ব্যবহার করছি, করোনা রোগী যখন তার ব্যবহৃত মাস্কটি ফেলে দিচ্ছেন, তার ড্রপলেটটি (মেডিকেলের ভাষায়- হাঁচি, কাশির তরল ময়লা) কিন্তু মাস্কের সাথে বা হ্যান্ড গ্লাভসের সাথে থেকে যাচ্ছে। তাই পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মাঝেও ব্যাপক হারে সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে।

পরিবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, হ্যান্ড গ্লাভস প্লাস্টিকের তৈরি অথবা পলিথিনের এসব বর্জ্য পচনশীল না। কাজেই ব্যবহারের পর যখন ফেলে দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো হয় ড্রেনে যাচ্ছে, নয়তো পাশের নদী বা ডাম্পিং ইয়ার্ডে যাচ্ছে। যেখানেই যাবে, এটি সঠিক পদ্ধতিতে ধ্বংস করা না হলে নদীগুলোর ফ্ল্যাশিং যেমন বাধাপ্রাপ্ত হবে, তেমনি মাটির উর্বরতা ৫০ থেকে ১০০ বছরের জন্য নষ্ট করে দেবে। কাজেই এসব পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

তাহলে এগুলো কীভাবে প্রক্রিয়াজাত করা যাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব বর্জ্য উৎস থেকে পৃথক করে সঠিক পদ্ধতিতে ধ্বংস করতে হবে। এর জন্য বাসাবাড়ি, হাসপাতাল বা ক্লিনিকে আবদ্ধ ব্যাগ দিতে হবে। যেন বর্জ্যটি ফেলার পর ওই ব্যাগের মুখ আটকে রাখা হয়। যেন ভাইরাস অন্যত্র ছড়িয়ে না যায়। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, বর্জ্য সংগ্রহের জন্য লাল, হলুদ ও সবুজ তিন ধরনের বিন বা ব্যাগ দিতে হবে। সেখানে মেডিকেল বর্জ্য, গৃহস্থালী বর্জ্য ও অন্যান্য কঠিন বর্জ্য আলাদা করে সংগ্রহ করা। সেটা করতে পারলে পরিবেশের জন্য ভালো।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, তারা নাকি ব্যবহৃত মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস ও পিপিই সংগ্রহের জন্য হাসপাতাল, ক্লিনিক ও আবাসিক ফ্ল্যাটে পৃথক ব্যাগ দেবে। এটা নগরবাসীর জন্য স্বস্তির বিষয়। এটা করতে পারলে অবশ্যই আশাব্যঞ্জক হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৩ জুন) ডিএনসিসির ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের রেডজোন পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় বিশেষ ধরনের ব্যাগ বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। ওই ব্যাগের ভেতর মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভাস ও পিপিইসহ অন্যান্য ব্যবহৃত বর্জ্য ফেলা হবে। বন্ধ মুখের এসব ব্যাগের নাম দেওয়া হয়েছে জি-ব্যাগ। ওই ব্যাগে বর্জ্য ফেলার পর মুখ বন্ধ করে রাখার পর বর্জ্য সংগ্রহকারীরা সেটি নিয়ে যাবেন। এরপর সঠিক প্রক্রিয়ায় সেগুলো ধ্বংস করা হবে।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এম সাইদুর রহমান বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের সময়ে পরিত্যক্ত ব্যবহার্য সামগ্রী ধ্বংস করা খুবই জরুরি। এ ব্যাপারে মেয়রের নির্দেশে আমরা ইতোমধ্যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আমরা প্রায় তিন লাখ পিস পলিব্যাগ যেটি জি-ব্যাগ নামে পরিচিত, সেগুলো দেব। মুখ আবদ্ধ ওই সব ব্যাগে ব্যবহৃত মাস্ক, গ্লাভস, পিপিইসহ অন্যান্য সমগ্রী সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের মাধ্যমে এ ব্যাপারে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর