কক্সবাজার: বিধ্বস্ত ও নিপীড়িত জীবন নিয়ে বাংলাদেশে ঠাঁই নিয়েছিল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। অত্যাচারের শিকার এই রোহিঙ্গাদের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও ছিল না। এক বছরের মাথায় সেই কচুরি পানার জীবনে এসেছে পরিবর্তন। শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গারা পেয়েছে কিছুটা স্বচ্ছল জীবন-যাপনের ছোঁয়া।
বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খাবার, স্যানিটেশন, চিকিৎসাসহ নূন্যতম সব চাহিদার অর্ধেকের বেশি এখন তাদের হাতের নাগালে। বলা যায় এক বছরে আমুল পরিবর্তন হয়েছে রোহিঙ্গা শিবিরে। ভবিষ্যৎ ভাবনার পাশাপাশি তারাও ভাবছেন সন্তানদের পড়াশোনা নিয়ে। তবে এতকিছুর পরও তাদের চাওয়া-আপন গৃহে ফেরার অধিকার।
সরজিমন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খাবার, স্যানিটেশন, চিকিৎসাসহ নূন্যতম সব চাহিদার অর্ধেকের বেশি পুরণ করা হয়েছে। উন্নত করা হয়েছে রোহিঙ্গা শিবিরের সঙ্গে কুতুপালং বাজারের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাছাড়া যেখানে রোহিঙ্গা শত শত টন জ্বালানী হিসেবে উখিয়া-টেকনাফের বন উজাড় করে আসছিল। সেটিও কমে এসেছে। কারণ গত এক মাস ধরে রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে গ্যাসের চুলা। স্বাস্থ্য সেবায়ও আনা হয়েছে আমুল পরিবর্তন।
রোহিঙ্গা নেতা নুর হোসেন বার্তা ২৪.কমকে জানান, আসার পর থেকে আমাদেরকে অনেক কিছু দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে চিকিৎসা থেকে শুরু করে যাবতীয় সবকিছু আমরা পাচ্ছি।
তুমব্রু সীমান্তের ক্যাম্পের নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, এক বছরের নো-ম্যান্সল্যান্ডে বাংলাদেশের যে সহযোগিতা পেয়েছি তা অভাবনীয়। প্রতি মাসে চাল, ডাল আলুসহ নানান সামগ্রী দেয়া হচ্ছে। তবে এসবের জন্য আমরা বাংলাদেশে আসি নি। যদি নিজ দেশে ফিরতে পারতাম তাহলে মনটা বুঝ পেতো।
বালুখালী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা জাফর মিয়া বলেন, সবকিছু পাচ্ছি। তারপরও নিজ দেশের প্রতি আবেগটা এখনো কাজ করছে। কখন নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে পারবো সে চিন্তা করছি। যদি আমাদের একটা সুষ্ঠু সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মিয়ানমার পাঠাতো তাহলে আরও খুশি হতাম।
মানবিক সহায়তাকারী সংস্থা ‘ইন্টার সেক্টর কো অর্ডিনেশন গ্রুপ’ (আইএসসিজি)’র মুখপাত্র সৈকত বিশ্বাস বার্তা ২৪.কমকে জানান, এক বছরে ৯৫০ মিলিয়ন ডলার রোহিঙ্গাদের জন্য লাগলেও এখণ পর্যন্ত ৩২ শতাংশ পাওয়া গেছে। বাকি ডলার না পেলে আগামীতে বড় ধরণের সংকট তৈরি হওয়ার আশংকা রয়েছে। তবে এখন পযর্ন্ত সবকিছু ঠিকভাবে চলছে।
ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম আজাদ বার্তা ২৪.কমকে বলেন, যে কোন সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ প্রস্তুত। কিন্তু যে সংকটের কথা বলা হচ্ছে সেটি কিছু দিনের মধ্যে হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত যে, ১৯৮০ দশকে নাগরিকত্ব আইন প্রণয়ন করে মিয়ানমারের জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের অধিকার কেড়ে নেয়। গত বছরের অক্টোবরের শুরুর দিকে ধাপে ধাপে সামরিক প্রচারণা চালিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের রোহিঙ্গাবিদ্বেষী করে তোলা হয়। এরপর ৯ অক্টোবর রোহিঙ্গাদের উপর সেনা ও স্থানীয় মগদের নির্যাতন শুরু হয়। ওই দিন থেকে কয়েক দফায় বাংলাদেশে এসেছিল রোহিঙ্গারা। এরআগেও ১৯৭৮ ও ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। ১৯৭৮ ও ১৯৯২ সালে যারা বাংলাদেশে আসে তাদের কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়ায় দুইটি ক্যাম্প রাখা হয়। সেখানে তারা এ পর্যন্ত ছিল। কিন্তু ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট আবারও নিপিড়নেরমুখে বাংলাদেশে আসতে হয় রোহিঙ্গাদের। কিন্তু এবার প্রায় ৭ লাখের বেশী। নতুন পুরাতন মিলিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংখ্যা এখন প্রায় ১২ লাখ।