ভালো নেই আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারীরা। বৃষ্টি নামলে পোলাপাইন নিয়ে ঘরের এক কোণায় ঘাপটি মেরে বসে থাকি কখন বৃষ্টি থামবে? বৃষ্টি না থামলে কখনো কখনো সারা রাতও না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে হয়। খাওয়া-দাওয়া ও গোসল করার জন্য যেই টিউবওয়েল দিয়ে ছিলো ওইগুলোও অধিকাংশ নষ্ট। বাথরুমের সমস্যার কথা আর কি বলবো? বাথরুম ধরলে খোলা মাঠে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এমনই পোড়া কপাল নিয়ে জন্ম নিছি, রোদে পুড়ি আবার বৃষ্টিতেও ভিজি, তারপরও আমাদের খবর নেয় না কেউ। এভাবেই নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের শিমুলের টেক সান্তান পাড়া গ্রামের আশ্রয়ন প্রকল্পে কষ্ট করে বসবাসের কথা জানান ওই প্রকল্পে বসবাসকারীরা।
পরিবার-পরিজন নিয়ে এভাবে এখানে বসবাস করা যে কত কষ্টের তা যারা বসবাস করছে তারা ছাড়া আর কেউ বলতে পারবে না। ২০০৪ সালে ওই গ্রামে আশ্রয়ন প্রকল্পটি নির্মাণ করে ভূমিহীন ১৩০টি পরিবারকে বসবাস করতে দেওয়া হয়। এরপর একবার সামান্য কয়েকটি টিন দিয়ে দু-তিনটি ঘর মেরামত করা হয়েছিল। এরপর দীর্ঘদিন মেরামত না হওয়ায় ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তবুও শেষ আশ্রয়স্থল এ আশ্রয়নেই থাকতে হচ্ছে। বর্তমানে ওই আশ্রয়ন প্রকল্পে প্রায় সাড়ে ৮শ মানুষ বসবাস করছেন।
সরেজমিনে আশ্রয়ন প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, প্রকল্পের ঘরগুলোর খুঁটি (পিলার) মরিচা ধরে খসে পড়ছে। সামনে থেকে ঘরগুলোর অবস্থা মোটামুটি ভালো দেখা গেলেও ভিতরে ঢুকলে দেখা যায় মাথার উপরের টিনে মরিচা ধরে অসংখ্য বড় বড় ছিদ্র হয়ে গেছে। ঘরের দরজা, জানালা ও বেড়া ভাঙা। সামান্য বৃষ্টি হলে চালের ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে। ঘরে থাকা চাল, ডাল, শুকনো খাবারসহ জামা কাপড় ভিজে যায়। বর্ষাকালে রাতে বৃষ্টি হলে সারা রাত জেগে চৌকির (খাটের) উপর পলিথিন দিয়ে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কোনো মতে বসে থাকেন তারা। অভাবের সংসারে পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণ জোগাড় করাই কঠিন হয়ে পড়ে। এরপর ভাঙা ঘর মেরামত করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না।
এ অবস্থাতেই রোদে পুড়ে-বৃষ্টিতে ভিজে আশ্রয়ন প্রকল্পের অসহায় মানুষগুলো অনেক দুঃখ কষ্টের মধ্যে কোনো রকমে জীবন কাটাচ্ছে। ওই আশ্রয়ন প্রকল্পের বসবাসকারী সদস্য শাহাবুদ্দিন, হাবিবুর ও রোপা বেগমসহ অনেকের সাথেই কথা বললে তারা জানান, আমরা গরিব মানুষ দিন আনি দিন খাই। সরকার আমাদের আশ্রয়ন প্রকল্পে আশ্রয় দিছেন। এখানে হয়েছে দুর্ভোগের আরেক নাম। আমাদের বাথরুমগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। বাথরুমগুলোর ময়লা যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। বাথরুমগুলো থেকে যেই দুর্গন্ধ আসে আমরা ঘরে থাকতে পারি না। এই আশ্রয়ন প্রকল্প যখন নির্মাণ করা হয়, তখন এখানে আমাদের খাওয়ার পানি ও গোসল করার জন্য ১৩টি টিউবওয়েল এবং একটি পুকুর করে দেওয়া হয়েছিল। ওই পুকুর বেশির ভাগ সময় শুকনা থাকে আর ১৩টি টিউবওয়েল থেকে এখন ১০টি টিউবওয়েল সব সময় নষ্ট থাকে এবং যাও তিনটা টিউবওয়েল আছে তা থেকেও ভালোভাবে পানি আসে না। ভোটের সময় হলে আমাদের এখানে প্রার্থীরা ছুটে আসেন। ভোট শেষ হলে আমাদেরকে সবাই ভুলে যান। নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা আমাদের দুর্ভোগের কথা শুনে সমাধান করার আশ্বাস দিলেও পরে আর কোনো খবর নেয় না।
ডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাবের উল হাই জানান, এই আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারী মানুষদের পানি সংকট সমাধানের জন্য পরিষদের অর্থায়নে সামা টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। ঘরগুলো নতুন টিন দিয়ে মেরামত করা, বাথরুমের সমস্যাগুলো ও পানির সংকটের বিষয়গুলো উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে আবেদন করেছি। আশা করি খুব দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান হবে।