শ্রীনগর, কাশ্মীর থেকে: মেঘ যেন পর্বতের চূড়ায় এসে মিশেছে। সেখান থেকে বরফ হয়ে গলে পড়ছে নিচে৷ আবার নভেম্বর মাস আসতে আসতে পুরো উপত্যকা হয়ে উঠবে বরফে শুভ্র সাদা। তখন আর এই থাজিওয়াস গ্লাসিয়ারে আসা যাবে না৷ হিমপ্রবাহে ঠান্ডা হয়ে রয়েছে চারপাশ। তবে এই আবহাওয়াকে বরফ শীতল বলা যাবে না।
সকালে শ্রীনগর থেকে রওনা দিলে পাহাড়ি পথে প্রায় ৯০ কিলোমিটারের যাত্রা৷ আঁকাবাকা পথে বেশ সময় লেগে যায়। সিন্ধু নদীকে হাতের ডানে রেখে বাঁক ঘুরে যেতে আড়াই ঘণ্টারও মতো সময় লেগে যায়।
সোনমার্গে পৌঁছে হাঁটা পথে বা ঘোর সোওয়ার হয়ে থাজিওয়াস গ্লাসিয়ারে যেতে সময় লেগে যায় প্রায় এক ঘণ্টার কিছু বেশি সময়৷ সোনমার্গের সবুজ উপত্যকায় যখন বরফে ছিটকে আসা সূর্যের রোদ আঁছড়ে পড়ে তখন এর তৃণভূমিকে স্বর্ণালী দেখায়৷ সময় কমিয়ে আনার জন্যে ঘোড়ার বাহন ধরি আমরা।
থাজিওয়াস গ্লাসিয়ার বা হিমবাহ হচ্ছে হিমালয় থেকে প্রবাহিত । দুনিয়ার উচ্চতম হিমপ্রবাহের মধ্যে একমাত্র গ্লাসিয়ারের গোড়াতেই গাড়ি পৌঁছাতে পারে। তবে বাকিটুকু হেঁটে বা ঘোড় সওয়ারে৷
পর্বত চূড়ার মাঝ দিয়ে বয়ে এসেছে সিন্ধুর প্রবাহ। পাথুরে নদী থেকে কলকল শব্দ বইছে। পাহাড়ের গাঁ থেকে বেয়ে বাসা পানির স্রোত এখানকার পাথরকে যেন ঠেলে নিয়ে যেতে চাইছে। আর পাথরের যেন টিকে থাকার লড়াই। কিছু পাথর একেবারে স্থুত হয়ে গিয়েছে। এই উপত্যকায় বাস করে গুজ্জার উপজাতি গোষ্ঠী।
উপত্যকা ধরে যেতে যেতে সবুজ বন আর ভেড়ার পালের ছুটে চলা মোহিত করবে। ঘোড়াগুলোর এই পথ মুখস্থ৷ কোমড় পর্যন্ত গভীর পানি পেরিয়ে নিয়ে গেল আমাদের৷ পানির ঝাপটায় ভিজে যাচ্ছে কাপড়।
স্থানীয় উপজাতি গোষ্ঠীরা মনে করেন এই হিমবাহ হচ্ছে স্বর্গ আর দুনিয়ার মাঝখানে। দূরে পর্বত চূড়াকে এরই মধ্যে বরফ ছেয়ে ফেলেছে৷ বরফে আচ্ছাদিত পর্বতগুলো খুব কাছে ডাকে। এর রহস্যজনক মায়া।
এখানেই গেলো বছর বলিউড অভিনেতা সালমান খান রেস থ্রি সিনেমার শ্যূটিংয়ে এসেছিলেন৷ তখন থেকেই অবশ্য এখানকার পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পরিবেশবাদীরা৷