যেভাবে গণমানুষের দল হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগ

, জাতীয়

অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ | 2023-08-24 23:16:51

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল। এই দলের সৃষ্টি একটি নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের রাজনৈতিক ইতিহাস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখতেন- আওয়ামী লীগ হবে গণমানুষের দল। যে দল বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা তথা সকল ধর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি এবং সমাজতন্ত্র বা শোষণমুক্ত সমাজ এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা চড়াই–উতরাই পেরিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছে আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিয়মতান্ত্রিক পথে আন্দোলন-সংগ্রাম করে মানুষের অধিকার আদায় করেছে দলটি। এনে দিয়েছে এ দেশের স্বাধীনতা। তাই স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘আওয়ামী লীগ’, ‘বঙ্গবন্ধু’ ও ‘বাংলাদেশ’ একটি আরেকটির সমার্থক।

১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে আপামর বাঙালি জাতি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শত্রুমুক্ত করে জন্মভূমি, অর্জন করে বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা, স্বতন্ত্র জাতিসত্তা।

যে আওয়ামী লীগের হাত ধরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা এসেছে, সেই দলটির নেতৃত্বেই অর্থনৈতিক মুক্তি তথা সমৃদ্ধ দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে প্রিয় জন্মভূমি। বর্তমানে যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নানা সংগ্রাম ও সাফল্য পেরিয়ে চলতি বছরের ২৩ জুন (মঙ্গলবার) আওয়ামী লীগ একাত্তর থেকে বাহাত্তরে পড়েছে। নতুন দিন, নতুন চিন্তা, নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। প্রতিবছরই ঐতিহ্যবাহী এ রাজনৈতিক দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়ে থাকে।

তবে এবার বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সতর্কতার অংশ হিসেবে তা আর হচ্ছে না। একই কারণে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন দিবস বা পার্বণ সীমিত বা স্থগিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশে দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এরই মাঝে মানুষের কল্যাণে এবং জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে।

আশা করি, সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপগুলোর পূর্ণ বাস্তবায়ন হবে। একই সঙ্গে সরকারের যে যেখানে রয়েছেন, তারা সুষ্ঠুভাবে তদারকি করবেন এবং দেশের আপামর জনসাধারণ দায়িত্বশীল আচরণ করবেন। তাহলে দ্রুত এই ভয়াবহ সংকট কাটিয়ে উঠতে আমরা সক্ষম হব।

আওয়ামী লীগ প্রায় একযুগ ধরে টানা ক্ষমতায়। এরই মধ্যে ‘উন্নয়নের মহাসড়কে’ অবস্থান করছে দেশ। সরকার এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশের অগ্রযাত্রা আর থামানো যাবে না।

এরই মধ্যে দেশজুড়ে অবকাঠামোগত নানা উন্নয়ন হয়েছে। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকাতেও রাস্তাঘাটের উন্নয়নসহ অবকাঠামো নির্মাণের কর্মযজ্ঞ চলছে। এর মধ্যে মেট্রোরেল, বিআরটি উল্লেখযোগ্য। নির্মিত হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মাসেতু, মোট ৬.১৫ কিলোমিটার সেতুর প্রায় অর্ধেকেরও বেশি এখন দৃশ্যমান।

এই সেতু বাস্তবায়ন হলে শুধু দক্ষিণবঙ্গই নয়, বদলে যাবে পুরো দেশের অর্থনৈতিক চিত্র। এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। ঢাকার আশপাশে নদ-নদী রক্ষা করে পরিবেশের সৌন্দর্য রক্ষায়ও চলছে নানাবিদ কর্মকাণ্ড।

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণকাজ কোনো সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু তা করে বিশ্বকে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেখিয়ে দিচ্ছেন যে, বাংলাদেশ পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার ফ্রেমওয়ার্ক দিয়েছেন। দিয়েছেন শতবর্ষব্যাপী ডেল্টা প্ল্যান।

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এখন বাস্তব। এগিয়ে চলেছে দেশ। ইন্টারনেট অব থিংসকে কাজে লাগিয়ে আসন্ন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রস্তুতি নিতে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা কাজে লাগিয়ে এই করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাস অনলাইনে নেয়া হচ্ছে।

অনেক প্রয়োজনীয় কাজ করা হচ্ছে ভার্চুয়ালি। গড়ে উঠছে হাই টেক পার্ক। শিল্পসমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে জোর দেয়া হচ্ছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে।

মূলত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই দেশে জনকল্যাণমুখী নানা উদ্যোগ নেয়া হয়। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের ফলেই সারা বিশ্বের কাছে ইতোমধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে ভূমিকা, জনবহুল দেশে নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুতা আনয়ন, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ।

৩০ লাখ শহীদের প্রাণ, লাখ-লাখ মা-বোনের অশ্রু, সম্ভ্রম ও রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেয়া এই বাংলাদেশকে আজকের অবস্থানে আসতে অতিক্রম করতে হয়েছে হাজারো প্রতিবন্ধকতা। যুদ্ধ বিধ্বস্ত, প্রায় সর্বক্ষেত্রে অবকাঠামোবিহীন সেদিনের সেই সদ্যজাত জাতির অর্জনের পরিসংখ্যানও অপ্রতুল নয়।

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) ৮টি লক্ষ্যের মধ্যে শিক্ষা, শিশুমৃত্যুহার কমানো এবং দারিদ্র্য হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে বয়সে পঞ্চাশের কাছাকাছি থাকা দেশটি। যার অবদান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগের।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বকে চমকে দেবার মতো সাফল্য আছে বাংলাদেশের। বিশেষত শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার এবং জন্মহার কমানো, গরিব মানুষের জন্য শৌচাগার ও স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান এবং শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম অন্যতম।

আর তা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য ও যোগ্য নেতৃত্বের কারণে। আসন্ন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবেও বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ রয়েছে।

আমাদের রয়েছে ৮ কোটি তরুণ, যাদের বেশির ভাগের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। তাদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে পারলেই কেবল তা সম্ভব। তাদের দক্ষ করার পাশাপাশি উদ্যোক্তাও হতে হবে। যারা সমৃদ্ধ বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে।

একটি দেশের উন্নয়নের অন্যতম পূর্ব শর্ত স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ, যা বাংলাদেশে বিরাজ করছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্ববিনিয়োগেরও অন্যতম কেন্দ্র। এখানে রয়েছে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল, তৈরি করা হচ্ছে হাইটেক পার্ক।

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার ক্ষেত্রেও রয়েছে আওয়ামী লীগের অবদান। এক্ষেত্রে সংগ্রাম ও ঐতিহ্যের অধিকারী রাজনৈতিক দলটির ভূমিকা প্রশংসনীয়। জাতি যখনই কোনো ক্রান্তিকালে পতিত হয়েছে, তখনই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগ।

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতা অস্ত যায়। এর প্রায় ১৯২ বছর পর একই দিনে ঢাকার টিকাটুলীর রোজ গার্ডেন প্যালেসে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’।

যার সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক হন শামসুল হক। বঙ্গবন্ধু তখন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৫২ সালে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি।

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ভাবনা ও চিন্তার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায় তার রচিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ বই দুটিতে। জাতীয় ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও অমূল্য এই গ্রন্থে অনেক অজানা কথা আমরা জানতে পেরেছি।

আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ তার ‘আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক একটি লেখায় লিখেছেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই বঙ্গবন্ধু হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেন, ‘এই পাকিস্তান বাঙালির জন্য হয়নি। একদিন বাংলার ভাগ্যনিয়ন্তা বাঙালিদেরই হতে হবে।’

সেই উদ্দেশে ১৯৪৮ সালে মোগলটুলিতে ‘ওয়ার্কার্স ক্যাম্প’ নামে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। যার মূল আলোচ্য বিষয় ছিল ‘গণবিচ্ছিন্ন নেতৃত্বের স্থলে জনসম্পৃক্ত নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা’ করে গণমানুষের অসাম্প্রদায়িক দল গঠন।

এই লক্ষ্য সামনে রেখে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার আগে ’৪৮-এর ৪ জানুয়ারি ‘ছাত্রলীগ’ গড়ে তোলেন বঙ্গবন্ধু। ‘ছাত্রলীগ’ ও ‘আওয়ামী লীগ’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের বীজ রোপিত হয়।

সূচিত হয় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের। ’৪৯-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্ন বেতনভোগী কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া আদায়ের সংগ্রাম সংগঠিত করার কারণে ১৯ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুকে প্রথমে কারারুদ্ধ করা হয়।

পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে বহিষ্কার করে শর্ত দেয় যে, যদি তিনি বন্ড দিতে সম্মত থাকেন তবে ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু অন্যায় সিদ্ধান্তের কাছে নতি স্বীকার করেননি।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী-তে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘সকলেই একমত হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করলেন; তার নাম দেয়া হল ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, জনাব শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং আমাকে করা হল জয়েন্ট সেক্রেটারি। খবরের কাগজে দেখলাম, আমার নামের পাশে লেখা আছে ‘নিরাপত্তা বন্দী’।’

ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ-এর মাঝে ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ছয় দফাসহ সব সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক আন্দোলনে সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

এদিকে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর ১৯৫৫ এর কাউন্সিলে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়। বাংলাদেশে স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর থেকে প্রবাসী সরকারের সব কাগজপত্রে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নাম ব্যবহার হতে শুরু করে। এভাবে জনগণের পাশে থেকে গণমানুষের দলে পরিণত হতে থাকে দলটি।

মহান মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তি পেয়ে এর মাঝে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি নবীন দেশকে পুনর্গঠনের কাজে হাত দেন বঙ্গবন্ধু। মাত্র সাড়ে ৩ বছরেই তার নেতৃত্বাধীন সরকার সময়োপযোগী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করে।

প্রথমভাগে পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন এবং দ্বিতীয়ভাগে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দিকে নজর দেন বঙ্গবন্ধু। এরই মধ্যে বাংলায় সোনার ফসল ফলতে শুরু করে, কারখানার চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। যা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য।

ওই সময় তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। এরপর শুরু হয় দেশে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতন। এর মাঝে দলে দেখা দেয় কোন্দল; নেতৃত্ব শূন্যের কারণে তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত কর্মীদের মাঝে হতাশা ছড়িয়ে পড়ে। আর দলটির বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণাও ছিল বেশি।

১৯৮০ সাল পর্যন্ত প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ বা বঙ্গবন্ধুর নাম নেয়া অলিখিতভাবে নিষিদ্ধই ছিল। ফলে এসব বাধা পেরিয়ে রাজনীতির মাঠে ঘুরে দাঁড়ানো মোটেও সহজ ছিল না দলটির জন্য।
এমন প্রেক্ষাপটে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি দলের হাল ধরলেন। ঘাতকেরা মনে করেছিল, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সব সদস্যকে হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

আসলে জনগণের সংগঠনের যে মৃত্যু নেই! প্রবাসে প্রাচীন সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে শেখ হাসিনা যেন আওয়ামী লীগের নবজন্ম দেন।

দলীয় সভাপতি হিসেবে দেশে ফিরে কয়েকভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তার দৃঢ়তা, লক্ষ্য স্থিরে বিচক্ষণতা, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা আওয়ামী লীগকে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে এসেছে।

আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক ভূমিকা এ দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একটি মাইলফলক।

নানা সংকটের পর ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনেও বিপুল ভোটে জয়ী হয় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলটি। এটি সম্ভব হয় জাতির প্রতি আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার আর দায়বদ্ধতার কারণে।

এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশকে বিশ্বে মর্যাদার আসনে আসীন করেছেন। তার উদ্যোগের ফলেই অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোলমডেল।

২০২১-এ আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করতে যাচ্ছি। বর্তমানে দেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীতে শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ রূপান্তরিত হবে মধ্যম আয়ের দেশে।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভয়াবহ এই দুর্যোগও মোকাবিলা করব, ইনশাআল্লাহ। আর তার নেতৃত্বেই সৃজনশীল, দক্ষ ও যোগ্য নেতারা অতীতের মতো আগামী দিনেও আওয়ামী লীগে আলো ছড়াবে; যে আলো ছড়িয়ে পড়বে সবুজ-শ্যামল বাংলার ৫৬ হাজার বর্গমাইল পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে- এই হোক আজকের প্রত্যয়।

লেখক: শিক্ষাবিদ ও উপাচার্য, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর।

এ সম্পর্কিত আরও খবর