লক্ষ্মীপুর: সানজিদা আক্তার। বয়স আনুমানিক ৬ বছর। মেঘনার কূলে হেঁটে হেঁটে তাকে লাকড়ি খুঁজতে দেখা গেছে। লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরকালকিনি ইউনিয়নের তালতলি এলাকায় তার দেখা মেলে। অল্প কিছুক্ষণ কথা বলে তার গল্প জানতে পারলাম। তার গল্পটা ঠিক নির্মল বাতাসের মতো। তবে তার বিস্তারিত পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। কিছু কথার উত্তর দিয়ে দৌঁড়ে চলে যায় সে।
সানজিদা বলেছে, ‘নদী আঙ্গো বেগ্গিন (সব) লই গেছে। অন আঙ্গো পরিবার কষ্টে আছে। লাডি-ছোডা (লাঠি/লাকড়ি) টোগাই জমা করি। এগিন হরে বেচমু। টিঁয়া (টাকা) দি চাইল (চাল) কিনমু। হেডে (পেটে) ভাত দিতে অইবো। এডা ছাড়া হেডে খানা যাইতো না।‘
ঈদ কেমন কেটেছে তা জানতে চাইলে সে বলে, ‘খাইতে হারি না আবার ঈদ। হেদিনও (ঈদের দিন) লাডি-ছোডা টোগাইছি। হুদা (খালি) গায়েই ঈদ কাডাইছি। কোনো নোয়া কোত্তা-কাড় আছিল না। কেউ আঙ্গোরে দ্যানো। এন্নাই (এভাবেই) চলে আমগো ঈদ।‘
পড়াশোনার খবর জানতে চাইলে সে বলে, ‘হড়ালেহা (পড়ালেখা) কইরতে আর মনে কয়। কিন্তুক ক্যামনে করমু। নদী আমগোরে হৈর (ফকির) করি দিছে। অন আমগো কিচ্ছু নাই। আব্বা নৌকাতে যায়। মাছটাছও হানা (পায়না)। খানাও হায়না হত্যিদিন (প্রতিদিন)।‘
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। এসেছে, আবার চলেও গেছে। তবে আনন্দিত কিংবা খুশি হতে পারেনি মেঘনা পাড়ের শিশুরা। পরিবারের বড়দের সঙ্গে শিশুরাও জীবনযুদ্ধের একজন সৈনিক। মেঘনা পাড়ের শিশুদের ঘুম ভাঙে হতাশা নিয়ে। আবার রাতে ঘুমাতে যায় সারাদিনের ক্লান্তির চাপ নিয়ে। মাঝে মাঝে পরিমাণ মতো খাবার জোটে না তাদের। তবুও নিয়তির পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে তারা।
মেঘনা পাড়ের শিশুরাও বড় হয়। তারাও একদিন বুঝতে শেখে তাদের দায়িত্ববোধ। তবে ততটুকু নয়, যতটুকু একজন শিক্ষিত লোক বুঝে। মেঘনা পাড়ের শিশুরা থেকে যায় অবহেলিত। পরিবারের অস্বচ্ছলতায় তাদের অবহেলার কারণ। এতে জীবনের তাগিদে প্রয়োজনীয় অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকে তারা। তবে তারাও পড়াশোনা করে অন্যদের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করার স্বপ্ন দেখে।
তাদের স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করতে কাউকে দেখা যায় না। তাদের হতাশা দূর করতে কেউ এগিয়ে আসে না। যারা আসে তারা শুধু আশ্বাস দিয়ে যায়। সে আশ্বাস আর বাস্তবায়ন হয় না।
উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের মেঘনা পাড়ের শিশুদের জীবন বেড়ে ওঠে এভাবেই। নদীর কূল ঘেঁষে কিংবা বেড়িবাঁধে তাদের বসবাস। এরকম অবহেলিত কয়েকজন ছোট্ট শিশুর সঙ্গে দেখা হয় বার্তা২৪.কমের। তবে তারা ছোট বলে কথা বলা যায়নি। তারা বাড়ির সামনে খেলা করছে। ছেলে মেয়ের জন্য দু’মুঠো খাবার জোগাড়ের জন্য তাদের বাড়িতে রেখে বাবা-মা কাজে গেছেন। তবে ছোট্ট শিশুগুলো নিরাপত্তাহীনতায় থাকে সব সময়। এভাবেই তাদের বেড়ে উঠতে হয়। তাদের জীবনের গতিপথ অবহেলা দিয়েই শুরু হয়।