রিপোর্ট মিলছে না, স্বাভাবিক চলাফেরা করছেন করোনা আক্রান্তরা

, জাতীয়

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, পীরগাছা (রংপুর) | 2023-08-31 17:57:42

রংপুরের পীরগাছায় তদবির ছাড়া করোনার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট মিলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। নমুনা দেয়ার ১৫ দিন পরেও রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না। তবে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে তদবিরের মাধ্যমে কয়েকজন রিপোর্ট পেয়েছেন বলে জানা গেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রিপোর্ট পেতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেকে পরিবারসহ বাইরের লোকজনের সংস্পর্শে আসছেন। ফলে উপজেলা জুড়ে ব্যাপক হারে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) পীরগাছা উপজেলায় সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার গুয়াবাড়ি এলাকার এক ব্যক্তি দ্বিতীয় নমুনা পরীক্ষায়ও করোনা পজিটিভ হন। তবে তৃতীয় নমুনা পরীক্ষার ফল দীর্ঘদিনেও মিলছে না। শুধু ওই ব্যক্তিই নন, করোনা পজিটিভ হওয়ার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট না পেয়ে অনেকে সঙ্গরোধ মানছেন না। নতুন নমুনা দেয়া ব্যক্তিরাও বিপাকে পড়েছেন। তারা রিপোর্ট পেতে নিয়মিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভিড় করছেন।

অনেকে নিজেকে সুস্থ মনে করায় রিপোর্টের আশা ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক চলাফেরা করছেন। নানা প্রয়োজনে হাটবাজারসহ বাইরেও যাচ্ছেন। তারা করোনা পজিটিভ হলে অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলায় গত ১০ জুন থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত পূর্বের সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষা করে ১৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। ১১ জুন থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত ৩৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ মাত্র ৮ জনের রিপোর্ট পাওয়া যায়। এর মধ্যে অন্তত ৫ জন তদবিরের মাধ্যমে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেয়েছে। সর্বশেষ গত ৭ দিনে কোনো রিপোর্টই আসেনি।

জেলার অন্যান্য উপজেলার সংগৃহীত নমুনা নিয়মিত পরীক্ষা করা হলেও পীরগাছা উপজেলার নমুনা পরীক্ষায় ঢিলেঢালা ভাব প্রথম থেকেই চলে আসছে। এ ক্ষেত্রে বৈষম্যেরও অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।

তারা বলছেন, এক সপ্তাহ আগে রংপুরের ৮ উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ সংক্রমিত উপজেলা ছিল পীরগাছা। অথচ সেই উপজেলায় গত ৭ দিনে কোনো নমুনার রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।

পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত ১ মে উপজেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এক ব্যক্তি মারা গেছেন। অন্যদিকে উপজেলা জুড়ে ৩৩ জন আক্রান্ত হলেও এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১০ জন। এ পর্যন্ত মোট ৩৮৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া গেছে ৩৫২ জনের। এছাড়া উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১ জন।

নমুনা দিয়ে রিপোর্ট না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়া আজাদুল ইসলাম বলেন, ‘নমুনা দেয়ার ১৫ দিন পরেও রিপোর্ট না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে স্বাভাবিক চলাফেরা করছি। তবে আতঙ্ক সব সময় মনের মধ্যে থাকছে।’

সাইফুল ইসলাম নামে একজন বলেন, ‘নমুনা দেয়ার ১০ দিন পর করোনা পজিটিভ রিপোর্ট পেয়েছি। এই সময়ে অফিস করতে হয়েছে। সহকর্মীদের সঙ্গে মাঠ পর্যায়েও কাজ করেছি। আমার করোনা পজিটিভ জানার পর সহকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিলেও গত ১৪ দিনে রিপোর্ট মিলেনি।’

পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সানোয়ার হোসেন জানান, নমুনা পরীক্ষার সুযোগ সীমিত হওয়ায় অনেক সময় রিপোর্ট পেতে দেরি হচ্ছে।

রংপুর সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার রায় জানান, প্রতিদিন যে হারে পরীক্ষা হচ্ছে তার তুলনায় রিপোর্ট বেশি জমা হচ্ছে। তাছাড়া দিন দিন নমুনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ফলাফল আসতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে রিপোর্ট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তদবিরের সুযোগ নেই।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর