মেহেরপুর: কোরবানির পশুর হাটে বিক্রি না হওয়ায় মাঝারি ও বড় আকারের গরু বাড়িতে ফেরত নিয়ে এসেছে মেহেরপুরের ব্যাপারীরা। ফেরত নিয়ে আসা গরুগুলোকে এখন জবাই করে কম দামে মাংস বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। ঋণ ও ধারদেনা পরিশোধ করতে না পারায় অনেকটাই আত্মগোপন করতে হচ্ছে ব্যাপারীদের। তবে ছোট আকারের গরু বিক্রেতারা লাভবান হয়েছে।
গরু মালিক ও ব্যাপারী সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর জেলায় প্রায় ৩ হাজার গরু ব্যাপারী রয়েছে। তারা সারা বছর স্থানীয় হাটে গরু কেনাবেচার পাশাপাশি কোরবানির সময় রাজধানীর পশুর হাটে গরু বিক্রি করে। এলাকার প্রান্তিক চাষিদের বাড়িতে পালিত গরুগুলো মূলত ব্যাপারীরা ক্রয় করে থাকে। চাষিদের পালিত গরুর কোনোটি নগদ টাকায় আবার কোনোটি বাকিতে কেনাবেচা হয়। ঢাকার পশুর হাটে গরু বিক্রি করার পরই টাকা বুঝে পায় চাষিরা। এবারে মাঝারি ও বড় আকারের গরু ফেরত আসায় ব্যাপারীদের পাশাপাশি চাষিরাও বিপাকে পড়েছে।
সহড়াবাড়ীয়া গ্রামের কয়েকজন গরু ব্যাপারী জানান, ধারদেনা ও ঋণ করে ১৭টি গরু কেনা হয়। ৬-৭ মণ মাংস হতে পারে এমন গরুগুলো বিক্রি হয়নি। ফেরত আনার সময় কয়েকটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাড়িতে নিয়ে এগুলো জবাই করে বাকিতে মাংস বিক্রি করা হয়েছে। কোরবানির সময় মাংস কেনায় চাহিদা না থাকায় কম দামে বিক্রি হয়েছে। কবে নাগাদ মাংস বিক্রির টাকা পাওয়া যাবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। পাওনাদাররা ব্যাপারীদের পিছু ছাড়ছে না। ফলে কিছুটা হলেও আত্মগোপন করতে হচ্ছে লোকসানের মুখে পড়া ব্যাপারীদের।
একই গ্রামের গরু ব্যবসায়ী রিপন হোসেন বলেন, ‘আমি ছোট আকারের ৮টি গরু ঢাকার হাটে বিক্রি করেছি। লাখের নিচে গরুর ব্যাপক চাহিদা থাকায় লাভ ভালো হয়েছে।’
জানা গেছে, বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় গরু পালন করেন পশ্চিম মালসাদহ গ্রামের ইটভাটা মালিক ইনামুল হক। তার খামারে পালিত ১৩টি গরুর সবগুলোই অবিক্রিত রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ইনামুল হক জানান, প্রতিটি গরু ৮-১০ লাখ টাকা করে বিক্রি করতে হবে। কিন্তু ঈদের আগে কোনো খরিদ্দার আসেনি। বিশেষ করে ঢাকার বড় বড় কোম্পানির লোকজন গরুগুলো ক্রয় করে থাকেন। তারা ঈদের পরে আসতে চেয়েছিলেন। এখনো পর্যন্ত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। গরুগুলো বিক্রি করতে না পারলে বড় ধরনের লোকসান হবে।
গরু ব্যাপারী জহুরুল ইসলাম বলেন,‘আমরা এক ট্রাকে ১৬টি গরু ঢাকার মিরপুরের পশুর হাটে তুলেছিলাম। কয়েকটি বিক্রি হয়নি। গরু নিয়ে যাওয়া ও ফিরিয়ে নিয়ে আসতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। যেগুলো বিক্রি হয়েছে তার লাভের টাকা দিয়ে হাটে থাকা-খাওয়ার খরচই তো উঠেনি।’
পূর্ব মালসাদহ গ্রামের গরু ব্যাপারী মহিবুল ইসলাম বলেন, ‘১৭টি গরুর মধ্যে মাত্র ২টি বিক্রি হয়। বড় গরুর কোনো খরিদ্দার ছিল না। বাধ্য হয়ে সবগুলো ফেরত আনতে হয়েছে। চাষিদের কাছ থেকে বাকিতে কিনেছিলাম। এখন চাষিতো গরু ফেরত নিচ্ছে না। মাংস বিক্রি করেও ক্রয় মূল্য উঠবে না। এমন পরিস্থিতিতে আমরা কী করব তা ভেবে পাচ্ছি না।’
মেহেরপুর জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ব্যাপারীদের লোকসানের বিষয়টি শুনেছি। কী পরিমাণ গরু ফেরত এসেছে তার তালিকা করা হবে।’