জলবায়ু অর্থায়নে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা জনগোষ্ঠীর মাঝে অগ্রাধিকার

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-27 16:23:48

জলবায়ু অর্থায়নে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মাঝে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প বরাদ্দের দাবি নেটওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন বাংলাদেশের।

রোববার (২৮ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) এর সাগর-রুনি মিলনায়তনে নেটওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন বাংলাদেশ (এনসিসি’বি) এর উদ্যোগে ‘জলবায়ু বাজেট ২০২০-২০২১-আকাক্সক্ষা: স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

মূলত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে জলবায়ু অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পরিত্রাণ এবং জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় যথাযথ বরাদ্দের দাবিতে নাগরিক সমাজের আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এনসিসিবির কর্মী সরকার আল ইমরানের উপস্থাপনায় সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন উন্নয়ন ধারার ট্রাষ্টের সদস্য সচিব আমিনুর রসূল বাবুল। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ডিআরাইউর সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ এবং কালের কণ্ঠের সিনিয়র সাংবাদিক নিখীল চন্দ্র ভদ্র।

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য পাঠ করেন “এনসিসি’বি”র রিসার্চ এন্ড অ্যাডভোকেসি অফিসার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।

লিখিত বক্তব্যে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ বছর এই ২৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের মোট বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের ৫৬.৬৯ শতাংশ (৩,২১,৯৮৫.০ কোটি টাকা), যার মধ্যে ৭.৫২ শতাংশ (২৪,২২৫.৭ কোটি টাকা) জলবায়ু অর্থায়ন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত অর্থ বছরে মোট বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৫৮.১১ শতাংশ (৩,০৪,০৩৮.২২ কোটি টাকা) এবং জলবায়ু সংশ্লিষ্ট বরাদ্দ ছিল ৭.৮১ শতাংশ (২৩,৭৪৮.৫৩ কোটি টাকা)। অর্থাৎ গত অর্থ বছরের তুলনায় এই বছর মোট বরাদ্দ (১৭,৯৪৬.৮ কোটি) এবং জলবায়ু সংশ্লিষ্ট বরাদ্দ (৪৭৭.২ কোটি) কিছুটা বাড়লেও আনুপাতিক হারে এই বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরের তুলনায় মোট বরাদ্দ ১.৪২ শতাংশ এবং জলবায়ু সংশ্লিষ্ট বরাদ্দ ০.২৯ শতাংশ কমেছে’। তিনি বলেন এই বাজেট বরাদ্দের উল্লেখযোগ্য অংশ যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে আবার অব্যয়িত থেকে যাচ্ছে। ২৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বরাদ্দকৃত জলবায়ু সংশ্লিষ্ট ব্যয় ছিল যথাক্রমে বাজেট বরাদ্দের মাত্র ৮২.২১ শতাংশ, ৭৬ শতাংশ এবং ৯৩.৬৩ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, এবারের বাজেটে জলবায়ূ অভিঘাত প্রশমন ও অভিযোজন পরিকল্পনায় বরাদ্দের  সুস্পষ্টতা নেই। এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ‘দ্বৈত গণনার’ নজির রয়েছে।

তিনি বলেন, এবারের জলবায়ু সংশ্লিষ্ট বাজেট বরাদ্দে খাদ্য নিরাপত্তা, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, কৃষি, বন ও পরিবেশের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তদুপরি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোর মধ্যে বাজেট বরাদ্দ ভারসাম্যপূর্ণ নয়। আবার জলবায়ূ ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থ বরাদ্দ অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে বেশি দেয়া হয় কিন্তু দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ, প্রশমন ও অভিযোজন এবং গবেষণা ও জ্ঞানের সমন্বয় ইত্যাদি খাতে বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

এনসিসিবি নিচের ৫ টি সুপারিশ

প্রতিবছর জিডিপি’র কমপক্ষে এক শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বরাদ্দ করতে হবে। জলবায়ু বাজেটের পরিচালনা ব্যয় কমিয়ে উন্নয়ন খাতে প্রতিবছর কমপক্ষে ১০ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি করতে হবে।

জলবায়ু অর্থায়নকে একটি তহবিল থেকে পরিচালনার লক্ষ্যে এবং জলবায়ু অর্থায়নে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে অবিলম্বে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন, ২০১০ পরিবর্তন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বেসরকারি ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি জলবায়ু কমিশন গঠনে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

জলবায়ু অর্থায়নে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহে প্রয়োজনে বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, দূষণকারী যানবাহন, বিমান ভ্রমন ও বিমানে মালামাল পরিবহণের ওপর ‘গ্রিন ট্যাক্স’ ধার্য্য করতে হবে এবং এই অর্থ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ব্যয়ের উদ্যোগ নিতে হবে।

অর্থমন্ত্রণালয়ের প্রবর্তিত ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট ফিসক্যাল ফ্রেমওয়াক’ এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রতিটি জেলার জন্যে পৃথক পৃথক ‘স্থানীয় ক্লাইমেট ফিসক্যাল ফ্রেমওয়াক’ তৈরি করতে হবে এবং জাতীয় জলবায়ু কমিশনের আওতায় জলবায়ু অর্থায়নকে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বিত করা যেতে পারে।

বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি অবিলম্বে চালু করতে হবে।

একই সঙ্গে এ সুপারিশ সমূহ বাস্তবায়নের জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও অন্যান্য দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর