সরকারি পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত, অবসরে পাঠানো হবে ২৫ হাজার শ্রমিককে

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 01:15:30

সরকারি পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হবে। লোকসানে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর প্রায় পঁচিশ হাজার স্থায়ী শ্রমিককে স্বেচ্ছা অবসরে (গোল্ডেন হ্যান্ডশেক) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পাটকলগুলোতে ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী কর্মচারী রয়েছেন।

রোববার (২৮ জুন) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানান।

তিনি জানান, ধারাবাহিক লোকসান বিবেচনায় গোল্ডেন হ্যান্ডশেক প্রক্রিয়ায় শ্রমিকদের অবসায়নের মাধ্যমে মিলগুলোকে বর্তমান দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদার উপযোগিরূপে পুনর্বিন্যস্ত করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে শ্রমিকদের চাকরির অবসান করতে।

গোলাম দস্তগীর গাজী বলেছেন, সরকারি পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হবে। পাটকলগুলো বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে। সরকারের পক্ষে বছরের পর বছর পাটকলের এত লোকসান বহন করা সম্ভব নয়। পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব জানান, গত ৪৮ বছরে সরকারকে এই পাট খাতে ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা লোকসান দিতে হয়েছে।

শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সরকারের পদক্ষেপ চূড়ান্ত করেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সাল হতে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের (৮,৯৫৪ জন) প্রাপ্য সকল বকেয়া, বর্তমানে কর্মরত শ্রমিকদের (২৪,৮৮৬ জন) প্রাপ্য বকেয়া মজুরি, শ্রমিকদের পিএফ জমা, গ্র্যাচুইটি এবং সে সাথে গ্র্যাচুইটির সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ হারে অবসায়ন সুবিধা একসাথে শতভাগ পরিশোধ করা হবে। এজন্য সরকারি বাজেট হতে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা প্রদান করা হবে। অবসায়নের পর মিলগুলো সরকারি নিয়ন্ত্রণে পিপিপি/যৌথ উদ্যোগ/জি টু জি/ লিজ মডেলে পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া হবে।

তিনি বলেন, বেসরকারি খাতে মাসিক মূল মজুরি ২ হাজার ৭০০  টাকার বিপরীতে উৎপাদনশীলতা ও মজুরি কমিশন ২০১৫ বাস্তবায়নের পর বিজেএমসি’র পাটকলসমূহে তা ৮ হাজার ৩০০ টাকার উন্নীত হয়েছে। ফলে সরকারি মিলে ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচে মজুরির অংশ ৬০- ৬৩ শতাংশ, যা বেসরকারি খাতের প্রায় তিনগুণ।

"উৎপাদন খরচ অস্বাভাবিক বেশি হওয়ায় বাজারে টিকে থাকার জন্য বিজেএমসিকে হ্রাসকৃত দরে পণ্য বিক্রয় করতে হয়। এতে করে পাটখাতে সার্বিক প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত/ বিনষ্ট হয় এবং বেসরকারি খাতের মিলগুলো উৎপাদিন পণ্যের দর নির্ধারণের ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হয়। এটি পাটখাতের সামগ্রিক ভারসাম্য ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নস্যাৎ করছে। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে পণ্য বিক্রয়ের প্রতিক্রিয়ায় অন্যতম প্রধান বাজার ভারত ইতোমধ্যে বাংলাদেশ হতে পাটপণ্য আমদানিতে এন্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে। এতে কেবল বিজেএমসিই নয়, বেসরকারি খাতের রপ্তানিকারকেরাও বিপাকে পড়েছে।"

"বর্তমানে পাটপণ্য উৎপাদনে বিজেএমসি’র অবদান মাত্র ৮ দশমিক ২১শতাংশ রপ্তানিতে এ হার আরও কম (৪.৪৫ শতাংশ)। নামমাত্র উৎপাদন ও অনুল্লেখ্য রাপ্তানির জন্য সরকারি বাজেট হতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে মিলগুলোর কার্যক্রম বর্তমান কাঠামোতে অব্যাহত রাখা অর্থনৈতিক নীতির সাথে সাংঘর্ষিক।"

মন্ত্রী আরও জানান, পলিথিন ও প্লাস্টিক দ্রব্যের অতি ব্যবহারের দরুণ বিশ্বব্যাপি সৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রভাবে বিশ্ব জুড়ে পাটসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তুর কদর সম্প্রতি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদে দ্বিতীয় কমিটিতে ‘প্রাকৃতিক তন্তুর উদ্ভিজ্জ ও টেকসই উন্নয়ন’ শিরোনামে পাটসহ প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহার বিষয়ক একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিকভাবে পাটের কদর ও ব্যবহারিক মূল্য বৃদ্ধির একটি সুদূরপ্রসারী সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এর পাশাপাশি গত ২ দশকে বিশ্ব জুড়ে পাটের তৈরি নানাবিধ ও বহুমুখী পণ্যের চাহিদা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। কিন্তু বহুমুখী পাটপণ্যের উপযোগি কাঁচামাল তৈরির উৎপাদনের ক্ষমতা বিজেএমসি’র পাটকলসমূহের নেই।

এছাড়াও নতুন মডেলে পুনঃচালুকৃত মিলে বর্তমান শ্রমিকেরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের সুযোগ পাবে। একই সাথে এসব মিলে নতুন কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে বলেও জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর