পানিবন্দি হাজারও পরিবার, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট

, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-08-09 18:22:32

আষাঢ়ের বৃষ্টির পানি আর উজানের ঢলে অশান্ত হয়ে উঠেছে তিস্তা নদী। গেল কয়েকদিনে তিস্তা বেষ্টিত রংপুর জেলার নদীপাড়ে বেড়েছে মানুষের আহাজারি। নদীর স্বভাব সুলভ আচরণে ঘরবাড়ি হারিয়েছে অনেক পরিবার। চরাঞ্চলে পানিতে তলিয়েছে সবজি ক্ষেতসহ ফসলি জমি। তিস্তা ব্যারেজের সবকটি গেট খুলে দেওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে পানিবন্দি হয়ে আছে দুই হাজারেরও বেশি পরিবার।

গেল ২৪ ঘণ্টায় রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও বেড়েছে ভাঙন ঝুঁকি। দেখা দিয়েছে শুকনা খাবারের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সংকট। পানিবন্দি ঘরবাড়িগুলো অনিরাপদ হয়ে উঠেছে বয়স্ক ও শিশুদের জন্য। গবাদি পশু-পাখির আশ্রয়স্থল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন নদীপাড়ের অসহায় মানুষরা।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার চরাঞ্চলের প্রায় ৭৫০ পরিবার পানিবন্দি। তলিয়ে গেছে আমন বীজতলা, ভুট্টা ও বাদামসহ শাক-সবজির ক্ষেত। কিছু কিছু গ্রামে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বেশ কয়েকটি ঘরবাড়িও। নদীগর্ভের খুব কাছাকাছি থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও মক্তব নিয়ে চিন্তিত স্থানীয়রা।

ভাঙন ঝুঁকি রোধে কাজ করছে নদীপাড়ের মানুষ

কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা চরে নদী ভাঙনে বিলীনের পথে চরের একমাত্র পাকা সড়কটি। এরইমধ্যে সড়কটির প্রায় ৬০০ ফুট ভেঙে গেছে। এই চরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের একটি মসজিদ রয়েছে ভাঙনের মুখে। অপরদিকে শংকরদহ চরে গুচ্ছগ্রামটি ভাঙনের কবলে পড়েছে। এখানকার প্রায় ১৫ পরিবারের ঘরবাড়ি তিস্তা নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে।

এছাড়া পানিবন্দি হয়ে আছে নোহালী ইউনিয়নের কয়েকটি চরের ২০০ পরিবার, কোলকোন্দ ইউনিয়নের চর চিলাখাল, মটুকপুর, বিনবিনা ও উত্তর কোলকোন্দ বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় ২০০ পরিবার, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ, বাঘেরহাট, কলাগাছি চরের ১৫০ পরিবার, মর্নেয়া ইউনিয়নের তালপট্টি চর ও মনের্য়া চরের ১০০ পরিবার, গজগন্টা ইউনিয়নের ছালাপাক ও আশপাশের এলাকায় ৫০ পরিবার এবং গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের গান্নারপাড় ও ধামুর এলাকায় ৫০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু বার্তা২৪.কম-কে জানান, টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত আর তিস্তার মূল পয়েন্টে গেট খুলে দেওয়ায় গঙ্গাচড়া তিস্তা অববাহিকায় পানি বেড়েছে। এতে নদীপাড়ের পরিবারগুলোর দুর্ভোগ বেড়েছে। খাদ্য সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

ভাঙন ঝুঁকি থেকে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে

এদিকে গঙ্গাচড়া ছাড়াও কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া, টেপামধুপুর, শহীদ বাগ ও নাজিরদহ ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কিছু কিছু জায়গাতে পানি কমে আসলেও দুর্ভোগ কমেনি। ওই চারটি ইউনিয়নে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছেন।

কাউনিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বার্তা২৪.কম-কে জানান, তিস্তার পানি বৃদ্ধির কারণে নদীপাড়ের অনেক পরিবার নিরাপদ স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। আবার কেউ কেউ কোনো উপায় না পেয়ে পানিবন্দি হয়েই দিনানিপাত করছেন।

তাদের খোঁজ খবর নিয়ে ত্রাণ সহায়তার ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

অন্যদিকে পীরগাছা উপজেলায় তিস্তা নদী তীরবর্তী গাবুড়ার চর, শিবদের চর, কিশামত ছাওলা, পূর্ব হাগুরিয়া হাশিম, ছাওলা, চর কাশিম, শিবদেব, রহমতের চর, চর তাম্বুলপুর ও চর রহমত গ্রামে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা বেড়েছে। অসহায় এসব পরিবারের মানুষের মধ্যে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গবাদি পশুর জন্য গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়নি। ফলে চরম বিপাকে পড়েছে বন্যা দুর্গত মানুষজন।

পানিতে তলিয়ে গেছে চরের ফসলি জমি

আগাম এই বন্যা মোকাবিলায় নদীপাড়ের মানুষের কোনো প্রস্তুতি না থাকায় শুকনা খাদ্য ও পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন জনপ্রতিনিধিরা। তাদের দাবি, বন্যা দুর্গত এলাকায় মানুষের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তবে পানি মেনে গেলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং দুর্ভোগ অনেকাংশে কমে আসবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর