গৃহবন্দীতে বিরক্তি: বাবার রিকশা নিয়ে রাস্তায় শিশু রবিউল

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর | 2023-08-26 02:13:45

লক্ষ্মীপুরসহ সারাদেশে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। দিনমজুররা হয়ে পড়েছেন কর্মহীন। অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা আর্থিক সংকটে ভুগছেন। প্রায় ৪ মাস শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এতে তারা অলস, বিরক্ত ও একঘেয়ে হয়ে পড়েছে। এজন্যই বাবার রিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমেছে শিশু শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম।

বুধবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে রবিউলকে লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের উত্তর তেমুহনি এলাকায় একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় বসে থাকতে দেখা যায় ৷ এসময় তার মুখে মাস্ক ছিল। স্টেশন এলাকায় অন্য রিকশা না থাকায় তার রিকশা দিয়েই প্রতিবেদককে সরকারি কলেজের সামনে আসতে হয় ৷

রবিউল সদর উপজেলার আবিরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ও একই উপজেলার নুড়ি গাছতলা এলাকার জহির উদ্দিনের ছেলে। পরিবারে তার মা, বড় বোন ও ছোটবোন রয়েছে। তারা ভাইবোন তিনজনই পড়ালেখা করছে।

এদিকে রিকশাযোগে আসার সময় বিভিন্ন প্রশ্নে রবিউল এই প্রতিবেদককে জানান, গত ৪ মাস সে স্কুল যেতে পারছে না। মাঝে মাঝে টেলিভিশনের দেখানো ক্লাস থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। বিকেলে খেলাধুলা করার মতো কেউ থাকে না। এজন্য সে একা হয়ে পড়েছে।

রবিউল জানান, তার বাবা দিনভর রিকশা চালিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি যায়। পরে সে তার বাবাকে বলে রিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হয়। ব্যাটারিচালিত হওয়ায় তার কষ্ট হচ্ছে না। সন্ধ্যার পর থেকে সে ১৫০ টাকার মতো উপার্জন করেছে।

শিশুশ্রম নিষিদ্ধ বললে রবিউল জানান, এ ব্যাপারে সে স্কুলে শিক্ষকদের কাছ থেকে শুনেছে। তবে রিকশা চালাতে কেউ তাকে বলেনি। নিজ থেকেই সে রিকশা নিয়ে বের হয়েছে। খেলাধুলা ও স্কুলে না যেতে পারার বিরক্তি দূর করতেই সে গত দুইদিন সন্ধ্যায় রিকশা নিয়ে বের হয়েছে। তবে আজ বেশি রাত হয়েছে বলে জানায় সে।

এদিকে লক্ষ্মীপুরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাতে অনেক বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে চালকদের। প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করলেই গুণতে হয় জরিমানা।

অন্যদিকে মহামারি করোনার কারণে লক্ষ্মীপুরে তিন ধাপে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ৩০ জুন মধ্যরাতে সর্বশেষ ধাপে লকডাউন শেষ হয়। এসময়ও প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করায় চালক ও রিকশা মালিকদের জরিমানা গুণতে হয়েছে। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়, লকডাউনে সংসার চালাতে তাদেরকে খুব কষ্ট করতে হচ্ছে। হয়তো রবিউল তার পরিবারের অভাবের কথা বলতে পারেনি। ছোট হলেও পরিবারের জন্য বাড়তি টাকা আয় করার জন্য বাবার রিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমেছে রবিউল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর