দুর্যোগ মোকাবিলা ও খাদ্য নিরাপত্তায় ব্রি ধান ৮৯ নতুন আশার আলো

, জাতীয়

মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মেহেরপুর | 2023-09-01 23:33:41

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) কর্তৃক উদ্ভাবিত ব্রি ধান ৮৯ নিয়ে মেহেরপুরের চাষিদের মধ্যে ধান আবাদে নতুন আগ্রহ দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বেশি ফলনশীল এ জাত সদ্য শেষ হওয়া বোরো মৌসুমে ফলন আর ঝড়-বৃষ্টি মোকাবিলার মধ্য দিয়ে চাষিদের আস্থা অর্জন করেছে।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ও ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা পূরণে এ জাতটি নতুন আশার আলো দেখাবে বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কৃষি কর্মকর্তারা।

খাদ্য চাহিদা পূরণে এ জাতটি নতুন আশার আলো দেখাবে

চাষি ও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সদ্য সমাপ্ত বেরো মৌসুমে গাংনী উপজেলার শিশিরপাড়া মাঠে বীজ উৎপাদন প্লটে ব্রি ধান ৮৯ আবাদ করে স্বদেশ সিড নামে একটি বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। প্রতি বিঘায় ৩০ মণের উপরে ফলন হয়েছে বলে জানান কৃষকরা। সার্বিক দিক বিবেচনায় আগামী বোরো মৌসুমে এ জাতটি চাষিদের কাছে নতুন আস্থার প্রতীক হিসেবে দেখা যাবে বলে মনে করছেন বীজ উৎপাদনকারী কৃষকরা। 

ঘূর্ণিঝড়েও ধান গাছ হেলে পড়েনি

ব্রি ধান ৮৯ আবাদকারী কৃষক শিশিরপাড়া গ্রামের জিনারুল ইসলাম দিপু বলেন, ধান গাছের উচ্চতা ব্রি ধান ২৮ এর চেয়ে কিছুটা বেশি। তবুও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের মতো দুর্যোগে ধান গাছ হেলে পড়েনি। শিষ থেকেও ধান ঝরেনি। এ বিষয়টি চাষিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধান গাছ খাড়া থাকায় কাটা মাড়াই ব্যয় কমেছে এবং গো খাদ্যের জন্য বিচুলি তৈরি সম্ভব। মাঝারি চিকন এ ধানের চাল খেতে সুস্বাদু ও ভাত ঝরঝরে। চাষাবাদ পদ্ধতি ও খরচ স্বাভাবিক। অপরদিকে ব্রি ধান ২৯ এর এক সপ্তাহ আগাম কর্তন করা যায়। ফলন অন্যান্য জাতের চেয়ে অনেক বেশি তাই এ জাতের ধান আবাদ খুবই লাভজনক।

ব্রি ধান ২৯ এর এক সপ্তাহ আগাম কর্তন করা যায়

একই গ্রামের কৃষক তানজিরুল ইসলাম বলেন, কৃষক জিনারুল ইসলামের খেতে ব্রি ধান ৮৯ জাতের ধান দেখতে চাষিরা ভিড় করতেন। ফলন যেমনি বেশি তেমনি খেত দেখতেও মন জুড়ানো। আগামী বোরোতে আমরা এ জাতটি আবাদ করবো।

এদিকে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও এ জাতটি নিয়ে আশাবাদী। ধান আবাদে চাষিদের বেশি লাভ ও দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণের বিষয়টি মাথায় রেখে মাঠ পর্যায়ে এ জাতের ধান আবাদ সম্প্রসারণের চেষ্টা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

দুর্যোগ সহনশীল ও উচ্চ ফলনশীল ব্রি ধান ৮৯ 

গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কেএম শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ব্রি ধান ৮৯ আবাদের সার্বিক বিষয় আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। এ জাতটি খুবই দুর্যোগ সহনশীল ও উচ্চ ফলনশীল। যা করোনাভাইরাস পরিস্থিতি উত্তরণ ও ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা মেটাতে সময়োপযোগী একটি জাত। ১৯৯৪ সালে ব্রি উদ্ভাবিত ব্রি ধান ২৮ ও ব্রি ধান ২৯ এর চেয়ে এ জাতটি বেশি জনপ্রিয় হবে বলে আশা করছি।

বিগত ৪০ বছরে দেশে ধান আবাদ তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে কৃষিবিদ কেএম শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ আরও বলেন, চালের চাহিদা স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে ব্রি ধান ৮৯ জাতটি আবাদ এখন সময়ের দাবি। ভালোভাবে আবাদ করতে পারলে হাইব্রিড জাতের কাছাকাছি ফলন দিতে সক্ষম এ জাতটি।

ব্রি ধান ২৯

ব্রি সূত্রে জানা গেছে, ২৮.৫ শতাংশ অ্যামাইলোজ সম্মৃদ্ধ এ জাতটি ব্রির জীবপ্রযুক্তি বিভাগে ব্রি ধান ২৯ এর সাথে সংকরায়ণ করা হয়। ব্রির বিজ্ঞানীদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে কয়েক বছর ধরে ব্রি গবেষণা মাঠ ও বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সন্তোষজনক হলে ২০১৮ সালে বোরো মৌসুমে আবাদের জন্য জাতটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় জাতীয় বীজ বোর্ড।

এ সম্পর্কিত আরও খবর