ফাঁকা কাউন্টার, বিপাকে পরিবহন শ্রমিকেরা

, জাতীয়

মাহিদুল মাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা) | 2023-09-01 18:33:56

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিস্তার রোধে বন্ধ রাখা হয়েছিল সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ গণপরিবহন। পরে গণপরিবহন সীমিত আকারে চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হলেও যাত্রীর অভাবে অচলাবস্থা কমিশনে কাজ করা শ্রমিক ও কাউন্টার মাস্টারদের।

গণপরিবহন শ্রমিকেরা বলছেন, সচেতনতার দিকটি খেয়াল করেই প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছে না। প্রয়োজনে যারা বের হচ্ছেন তাদের সংখ্যাও যৎসামান্য। এ সংখ্যক যাত্রীর কাছে টিকেট বিক্রি করে যা কমিশন আসে তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে চলছে সংসার। ফলে কমিশন ভিত্তিক কাউন্টার মাস্টার, ড্রাইভারসহ অনেকেই জীবনযাপন করছেন চরম কষ্টে।

টিকেট বিক্রি করে যা কমিশন আসে তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে চলছে সংসার

শনিবার (৪ জুলাই) বিকেলে সাভার স্ট্যান্ড, নবীনগর, বাইপাইল ও জিরানী বাজার এলাকার বিভিন্ন কাউন্টার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব কাউন্টারই ফাঁকা। যাত্রীর কোন চাপ নেই। অলস সময় পার করছেন কাউন্টার মাস্টাররা। মাঝে মধ্যে দুই একজন যাত্রী আসছে কাউন্টারে। দীর্ঘ সময় পর স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী ২০ জনের সিটের বিপরীত যাত্রী আসছে ৮ থেকে ১০ জন।

আশুলিয়ার বাইপাইলে আলহামরা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার নাদিম বিক্রির জন্য টিকেট নিয়ে বসে আছেন কাউন্টারে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত টিকেট বিক্রি করেছেন ৪টি আর অন্যান্য লোকাল গাড়ির টিকেট বিক্রি হয়েছে ৩টি। তার সাথে কথা হলে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা প্রতি টিকিটে কমিশন পাই ৩০ টাকা। সারাদিন টিকেট বিক্রি করেছি ৪টি, যা থেকে ১২০ টাকা পেয়েছি। বাসা থেকে কাউন্টারে যাতায়াত রিকশাভাড়া যায় ৪০ টাকা। বাকি ৮০ টাকা দিয়ে ৪ সদস্যের সংসারে কি হয়। বাসা ভাড়া দিতে পারি না গত ৪ মাস। করোনায় ঋণের বোঝা বেড়েছে। এরকম চলতে থাকলে আমাদের অস্তিত্বই থাকবে না। সহযোগিতা ছাড়া এই পরিস্থিতির মধ্যে আমরা চলতে পারবো না।

২০ জন যাত্রীর বিপরীতে ১০ থেকে ১২ জন যাত্রী হচ্ছে

নবীনগরের সার্বিক পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার বলেন, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা গাড়িতে সব কাউন্টার মিলে ২০ জন যাত্রীর বিপরীতে ১০ থেকে ১২ জন যাত্রী হচ্ছে। যাত্রী সংখ্যা এত কম যে এই পেশায় থেকে সংসারই চালানো সম্ভব হচ্ছে না। যাত্রী কম থাকায় একাধিক বাসের মালিক চালাচ্ছে ১টি করে বাস। ফলে বেকার হচ্ছে অনেক চালকও।

কাউন্টারে বসে থাকা পিংকি পরিবহনের চালকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, রাস্তায় এখন তিনটি গাড়ি চলে। ৩ গাড়ির বিপরীতে চালক আছেন ১৬ জন। ২৪ ঘন্টা পর পর একজন চালক পরিবর্তন হয়। প্রায় ৫ দিন পর একটি ট্রিপ পাওয়া যায়। প্রতি ট্রিপে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার তেল লোকসান যায় মালিকের। তারাই বা কিভাবে আমাদের টাকা দেবে। এজন্য রাস্তায় বাসের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন মালিক পক্ষ।

পুষ্প পরিবহনের চালক বলেন, আমি গত চার মাস ধরে বসে আছি। আগে তো গাড়িই বন্ধ ছিল আর এখন চালানোর মতো গাড়িই পাচ্ছি না। ঋণ করেই দিন পার করে দিচ্ছি।

এব্যাপারে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র কমিটি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা কেম এম মিন্টু বলেন, পরিবহন শ্রমিকরা সাধারণত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রাপ্ত, তাই তারা এ ধরনের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারছে না। তারা বাস মালিকের দ্বারা স্থায়ী নিয়োগ পেলে এ ধরনের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারতো। তবে যাই হোক তাদের পাশে মালিকপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দাঁড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর