আশুলিয়ায় অবৈধ গ্যাসের ছড়াছড়ি, দুর্ঘটনায় বাড়ছে প্রাণহানি

, জাতীয়

মাহিদুল মাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা) | 2023-08-26 20:45:44

নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে রান্নার জন্য বাসাবাড়িতে ব্যবহার করা হয় প্রাকৃতিক গ্যাস। আর এই গ্যাস সংযোগ অবৈধ হলে দুশ্চিন্তা ও মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অবৈধ সংযোগে ব্যবহৃত পাইপ ও ফিটিংস নিম্নমানের হওয়ায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। শুধুমাত্র সাভারের আশুলিয়ায় এ ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১১ জন।

একসময় আবাসিক ও শিল্প কারখানায় সংযোগ দেওয়া হতো বৈধভাবেই। তবে ২০০৯ সালের ২১ জুলাই থেকে শিল্প ও বাণিজ্য এবং ২০১০ সালের ১৩ জুলাই থেকে আবাসিক গ্যাস সংযোগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। পরে ২০১৩ সালের ৭ মে আবার আবাসিক সংযোগের অনুমোদন দেওয়া হয়। অজানা কারণে তা বন্ধ ঘোষণা করা হয় আবার। এর পর থেকেই সক্রিয় গ্যাস চোর চক্র। বিভিন্ন মহলের ছত্রছায়ায় চলছে গ্যাস চুরির মহোৎসব।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটা সত্ত্বেও এক শ্রেণীর মহলকে ম্যানেজ করে সংযোগ দিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। আর এসব সংযোগে নিম্নমানের পাইপ ও ফিটিংস ব্যবহার করায় প্রায়ই বিস্ফোরণ, দেয়াল ধস ও লিকেজ থেকে লাগা আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যাচ্ছেন অনেকেই। প্রতিটি দুর্ঘটনাই ঘটছে ভোরে রান্নার সময়।

২০১৮ সালের ২ নভেম্বর ভোরে আশুলিয়ার মানিকগঞ্জ পাড়া এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগের লিকেজ থেকে আবদুল হামিদের বাড়িতে ঘটে বিস্ফোরণ। এ ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মারা যান ৬ জন।

২০১৯ সালের ৩ জুলাই ভোরে চোরাই গ্যাসের লাইন থেকে আশুলিয়ার কাঠগড়া উত্তরপাড়া দুকাঠি এলাকায় একইভাবে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসময় ঘটনাস্থলেই এক শিশু নিহত হয়। অগ্নিদগ্ধ হয় আরো একজন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

গ্যাস পাইপ লিকেজ থেকে বেড়েছে দুর্ঘটনা

২০২০ সালের ৯ জুন ভোরে কাঠগড়া উত্তরপাড়া এলাকার ইমনের বাড়িতে আবারও হয় বিস্ফোরণ। ওই ঘটনায় দগ্ধ হয় শিশুসহ ৭ জন। তবে বেঁচে যান তারা।

মাস খানেক পরে ৫ জুলাই ২০২০, ভোরে আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার দুর্গাপুর চালা গ্রামের শহীদ হাজির বাড়িতে আবার চোরাই গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ হয়। এসময় ঘটনাস্থলেই শিশু আল-আমীন মারা যায়। পরে দম্পতি কাশেম ও ফাতেমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কাশেমকে মৃত ঘোষণা করে কর্তব্যরত চিকিৎসক। ৭ জুলাই সন্ধ্যায় আল আমীনের মা ফাতেমারও মৃত্যু হয়।

২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত অবৈধ গ্যাস সংযোগের দুর্ঘটনায় শুধু জীবন দিয়েছেন ১১ জনের। সংযোগ দাতাদের পরোক্ষ হত্যাকারী বলে চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান সচেতন মহল। এছাড়াও জামগড়া, ভাদাইল, গাজীরচট ও হেমায়েতপুরে ত্রুটিপূর্ণ ও অবৈধ গ্যাস সংযোগ থেকে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন অন্তত ২৭ জন।

কাঠগড়া এলাকার বাড়িওয়ালা মেহেদী হাসান বার্তা২৪.কমকে বলেন, শুধু আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় গত ১১ মাসে তিনটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু ও ৭ জন দগ্ধ হয়েছেন।

ভাদাইল এলাকার ভাড়াটিয়া বিজলি বলেন, গ্যাস না থাকলে একটু সমস্যা হয়। সকালে রান্না করে খেয়ে আবার লাঞ্চ নিয়ে ৮টার আগেই কারখানায় যেতে হয় এটাই সমস্যা। একটু সুবিধার জন্য ঝুঁকিতেই থাকতে হয়।

এব্যাপারে সাভার তিতাস গ্যাসের উপ-ব্যবস্থাপক ও অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযানের সমন্বয়ক আব্দুল মান্নান বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পাওয়া মাত্র আমরা এসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান পরিচালনা শুরু করবো। এক্ষেত্রে আমরা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নেবো।

এ সম্পর্কিত আরও খবর