কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা কুসুমকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তার স্বামী উপজেলার ঝলম দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান ওরফে শাহীন জিয়াকে অভিযুক্ত করেছেন তিনি।
এছাড়া, জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে এই ঘটনায় মনোহরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন আফরোজা কুসুম।
কুসুম উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা মহিলা লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতির পদে রয়েছেন। আর জিয়াউর রহমান উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়কের পদে আছেন।
এদিকে, এ ঘটনার পর থেকে নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কিত এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন আফরোজা কুসুম।
বুধবার (৮ জুলাই) দুপুরে উপজেলা পরিষদে অবস্থিত নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আফরোজা কুসুম জানান, গত ৩ জুলাই (শুক্রবার) সন্ধ্যার সময় আমি উপজেলার বাংলাইশ গ্রাম থেকে কাজ সেরে প্রাইভেটকারযোগে আমার বাসভবনে ফিরছিলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে গাড়িটি লালচাঁদপুর আসা মাত্র আমাকে বহনকারী প্রাইভেটকার চালকের মোবাইলে আমার স্বামী জিয়াউর রহমান ফোন দিয়ে আমাদের লোকেশন জানতে চান। এরপর ড্রাইভার সরল বিশ্বাসে তাকে বলে আমরা লালচাঁদপুর আছি। পরবর্তীতে রাত আনুমানিক ৮ টার সময় মনোহরগঞ্জ উত্তর বাজারে এলে আমার স্বামী সিগন্যাল দিয়ে গাড়ি থামাতে বলেন। এরপর সে গাড়ির জানালার ভেতর মাথা ঢুকিয়ে আমি গাড়িতে একা আছি কি-না তা নিশ্চিত হয়। পরবর্তীতে প্রাইভেটকারটি মনোহরগঞ্জ বাজারের দক্ষিণ মাথায় আসা মাত্রই ৭/৮ জন ব্যক্তি মুখে মাস্ক ও হেলমেট পরিহিত মোটরসাইকেল নিয়ে আমার গাড়ির পিছনে ধাওয়া করে। এরপর মনোহরগঞ্জ বাজারের খোদাইভিটা এলাকার বালুর মাঠের সামনের পাকা রাস্তার ওপর তারা মোটরসাইকেল দিয়ে ঘেরাও করে গাড়ি থামিয়ে দরজা খুলতে বলে। এ সময় চালক দরজা না খুললে তারা আমাকে গালমন্দ করতে থাকে। পরবর্তীতে গাড়ির দরজা খুললে ওই লোকগুলো আমাকে হত্যাসহ বিভিন্ন রকমের হুমকি প্রদান করে আমার ওপর আক্রমণের চেষ্টা করে। তবে বিষয়টি টের পেয়ে তাৎক্ষণিক আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে ওই লোকগুলো দ্রুত দক্ষিণ দিকে চলে যায়।
আফরোজা কুসুম আরো জানান, শাহীন জিয়া বিয়ের পর থেকে প্রায়ই যৌতুকের জন্য আমাকে নির্যাতন ও মারধর করেছে। এ ঘটনায় আদালতে একটি মামলাও করেছেন তিনি। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছেন। এরপর থেকে সে বিভিন্ন সময় মামলা প্রত্যাহারের জন্য আমাকে হত্যা করাসহ বিভিন্ন হুমকি দিয়ে আসছিল। সে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলেছে মামলা প্রত্যাহার না করলে আমাকে ১০০ পুরুষ দিয়ে ধর্ষণ করাবে। এছাড়া আমার বাবার বাড়িতেও ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী পাঠিয়ে হামলা করিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করিয়েছে সে। কুসুমের বিশ্বাস তার স্বামী জিয়াউর রহমানই সেদিন তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। যদিও সময় মতো লোকজন চলে আসায় তিনি প্রাণে রক্ষা পান।
তবে বুধবার দুপুরে এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত জিয়াউর রহমান ওরফে শাহীন জিয়ার ফোনে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এক পর্যায়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে ফেলেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মনোহরগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাহাবুব কবির বলেন, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা কুসুম থানায় একটি জিডি করেছেন। আমরা সেটির তদন্ত করে দেখছি।