বেনাপোল স্থলবন্দরে ১১ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বেনাপোল (যশোর) | 2023-08-23 00:35:11

করোনা পরিস্থিতিতে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অর্থবছর শেষে সরকারি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ১১ কোটি ৬ লাখ টাকা ঘাটতি হয়েছে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে।

বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) সকালে বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি বার্তা২৪.কম-কে নিশ্চিত করেন।

২০১৯-২০ অর্থবছরে বেনাপোল স্থলবন্দরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯৫ কোটি ৮ লাখ টাকা। অর্থবছরের শেষ দিন পর্যন্ত এই স্থলবন্দরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এ হিসাব অনুযায়ী ১১ কোটি ৬ লাখ টাকার রাজস্ব ঘাটতি। এসময় ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৮ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯৫৩ মেট্রিক টন।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, ভারত থেকে যে পণ্য আমদানি হয় প্রাথমিক অবস্থায় পণ্যের চালানটি বেনাপোল বন্দরের ওয়ারহাউসে (পণ্যগারে) রাখা হয়। এসময় আমদানি পণ্য রক্ষণাবেক্ষণ ও পণ্যগার ভাড়া বাবদ বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নির্ধারিত হারে এই রাজস্ব আদায় করে থাকে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, বেনাপোল বন্দরের বর্তমান ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন। তবে এখানে সব সময় পণ্য থাকে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন। চাহিদা অনুপাতে জায়গা না থাকায় মুল্যবান আমদানি সামগ্রী রাখতে হয় খোলা আকাশের নিচে। এতে সুবিধা বঞ্চিত হয়ে ব্যবসায়ীরা অনেকে এ বন্দর ছেড়ে বাণিজ্য করছেন অন্য বন্দর দিয়ে। ফলে এ বন্দরটিতে কাঙ্ক্ষিত রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছে না।

বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, এ পথে রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন বাড়াতে হবে। এছাড়া বন্দরে বারবার রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে অনেক ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন। বন্দর তাদের কোনো ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় তারা এ বন্দর ছেড়েছেন।

বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দীন গাজী বলেন, পণ্য ছাড় করণের ক্ষেত্রে বৈধ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায় আমদানি কমে যাওয়ার একটি কারণ। এতে রাজস্ব দিন দিন ঘাটতি হচ্ছে।

বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, করোনার কারণে প্রথমত আড়াই মাস ধরে আমদানি বন্ধ ছিল। এ কারণে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। আর ইতিমধ্যে বেনাপোল বন্দরে অনেক অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। এছাড়া আরো যে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে এর মধ্যে বন্দরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, জেল খানার ন্যায় বন্দরের চারিদিকে প্রাচীর নির্মাণ ও নতুন জায়গা অধিগ্রহণ। এসব উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হলে বেনাপোল বন্দর বিশ্বের কাছে একটি আধুনিক বন্দর হিসেবে পরিচিতি পাবে। তখন আমদানি বৃদ্ধির পাশাপাশি দ্বিগুণ রাজস্ব রাড়বে।

উল্লেখ্য, বেনাপোল বন্দর থেকে ভারতের কলকাতা শহরের দূরত্ব ৮৩ কিলোমিটার। মাত্র তিন ঘণ্টায় একটি পণ্যবাহী ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে পৌঁছাতে পারে কলকাতা শহরে। তেমনি একই সময় কলকাতা থেকে পণ্যবাহী ট্রাক পৌঁছায় বেনাপোল বন্দরে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে এ পথে ব্যবসায়ীদের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে প্রবল আগ্রহ রয়েছে। দেশে স্থলপথে যে পণ্য আমদানি হয় তার ৭০ শতাংশ হয়ে থাকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হচ্ছে। যা থেকে সরকার প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে থাকে। আমদানি পণ্যের মধ্যে শিল্পকারখানার কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, কেমিক্যাল ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য রয়েছে। তবে এ পথে আমদানি কমলেও দিন দিন বাড়ছে রফতানির পরিমাণ। এছাড়া বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন পণ্য রফতানি হয়ে থাকে। এ বছর ১০ হাজার কোটি টাকার পণ্য ভারতে রফতানি হওয়ার কথা ছিল। রফতানি পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাত পণ্য, তৈরি পোশাক, কেমিক্যাল, বসুন্ধরা টিসু, চালের কুড়া, মেহেগনী ফল, মাছ ও অক্সিজেনসহ প্রায় ৫০ প্রকারের পণ্য রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর