করোনায় ব্যাহত গর্ভবতী চিকিৎসা সেবা

, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-25 18:31:12

পাঁচ মাসের গর্ভবতী আরফিনা খাতুন গিয়েছিলেন সুরক্ষা জেনারেল হাসপাতালে (রূপনগর)। হাসপাতাল সাফ জানিয়ে দিয়েছে ইসিজি করা সম্ভব না। এরপর যান মেডিনেট মেডিকেল সার্ভিসে (আরামবাগ) তারাও জানিয়েছে ডাক্তার নেই ইসিজি সম্ভব নয়।

সে কারণে ইসিজি করতে পারেননি। হতদরিদ্র ঘরের সন্তান আফরিনা বাধ্য হয়ে লোকাল ফার্মেসীর পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেয়েছেন। করোনায় অন্যান্য রোগিদের মতো গর্ভবতী মায়েরাও চরম সংকটের মধ্যে রয়েছে। যখন সময়ে সময়ে আলট্রাসনোগ্রাফি করে গর্ভের সন্তানের অবস্থা নিশ্চিত হতে বলা হয়েছে। তখন করোনায় আতঙ্কে হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে অনেক হাসপাতাল। অন্যদিকে করোনার উপসর্গ শ্বাসকষ্ট, তাই ইসিজি এড়িয়ে চলছে অনেক হাসপাতাল।

আর এ কারণে বিড়ম্বনায় ভুগছেন গর্ভবতী মায়েরা। আফরিনার গর্ভের বয়স এক ৬ মাস হতে চলছে। তার কাছে প্রশ্ন ছিল গর্ভকালীন সময়ে পাঁচটির মতো টিকা গ্রহণ জরুরি আপনি কি জানেন? জবাবে বলেন শুনেছি। কিন্তু কি করবো হাসপাতালে গেলেই নাকি রোগি ফেরত দেয় আশপাশেরগুলোতে গিয়েছিলাম তারাও ফেরত দিয়েছে। আর কোথায় টিকা পাওয়া যায় এর কোনো খোঁজ আমি জানি না।

ঈদের পর গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের চিলমারীতে চলে যাবেন। সেখানে গিয়ে টিকার নেওয়ার ইচ্ছা আছে তার। কিন্তু ততোদিনে কি তার সেই টিকা গ্রহণের সময়ের উপযুক্ততা থাকবে। সেই প্রশ্নের জবাবে সরল উত্তর দিয়েছেন। না হলে আর কি করার আছে। দু’বেলা খাবার জুটছে না। এতো খরচ করবো কোথা থেকে।

করোনায় ব্যাহত হচ্ছে গর্ভবতী চিকিৎসা সেবা, ছবি: বার্তা২৪.কম

বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যু এবং নবজাতকের মৃত্যুহাররোধে বিশাল সাফল্য অর্জন করেছে। যার ফলে গড় আয় লাফিয়ে বেড়েছে। এমডিজি অর্জনে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়ে পুরস্কার ঘরে তুলেছে। যার অনেকটা সম্ভব হয়েছে এসব টিকার মাধ্যমে। আবার বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচিও সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ২০১৯ সালে। গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন এবং ইমিউনাইজেশন-জিএভিআই এই পুরস্কারটি দিয়েছিল। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘ইমিউনাইজেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের স্বীকৃতি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী পুরস্কারটি গ্রহণের পর উৎসর্গ করেছিলেন বাংলাদেশের জনগণকে। ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকে টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের সাফল্যের গল্প শুনিয়েছিলেন।

স্বাস্থ্যকর্মীদের কঠোর পরিশ্রমে গড়ে তোলা টিকা ব্যবস্থা করোনার কারণে ম্লান হতে বসেছে। এই ব্যর্থতার ফল ভয়ঙ্কর অতীতে দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যত প্রজন্ম গড়তে এখনই এ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিএসএমএমইউ এর সহযোগী অধ্যাপক (গাইনি ও অবস) ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেছেন, গর্ভাবস্থায় মায়ের স্বাস্থ্য শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। মায়ের অসুস্থতা শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। যেমন গর্ভাবস্থায় মা যদি রুবেলায় আক্রান্ত হন, তবে শারীরিক ত্রুটি তো বটেই, এমনকি অনেক সময় গর্ভেই শিশুর মৃত্যু হতে পারে। রুবেলা আক্রান্ত মায়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশুর এই ত্রুটি স্থায়ী। তাই পরবর্তী সময়ে শিশুটিকে দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। আবার কিছু রোগ আছে, যা মায়ের গর্ভ থেকেই শিশুর শরীরে প্রবেশ করে।এইডস, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি এমন কিছু রোগ। সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে টিকার ভূমিকা অনস্বীকার্য। অনেক সংক্রামক রোগই টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ আবু হোসেন মঈনুল আহসান বার্তা২৪.কমকে বলেন, করোনার এই সময়ে সকল ধরনের টিকাদান কর্মসূচি চলমান রয়েছে। টিকা দানের ক্ষেত্রে আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই এই কর্মসূচি পালন করছেন। টিকা দেওয়ার সময় শিশুর কাছ থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখছেন টিকাদান কর্মী। আমাদের তরফ থেকে টিকা দানের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মীকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে। করোনার প্রথমের দিকে দুই এক জায়গায় অভিযোগ ছিল। পরবর্তীতে আমরা স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখেছি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর