নীলফামারীতে ইটাখোলা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ভূমি কর আদায়ে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের রসিদ প্রতি ৩০০ টাকা করে বেশি নিলেও রশিদে তা উল্লেখ করেন না ওই কর্মকর্তা। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় হয়রানি শিকার হয়েছেন অনেক ভুক্তভোগী।
গত বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) দুপুরে প্রতিবেদকের কাছে ওই ভূমি সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ করে নীলফামারী পৌরসভার উকিলপাড়া এলাকার বেলালুল আমিন।
তিনি জানান, 'দুপুর ১২ টায় আমি নিজ নামীয় ও আমার এক আত্মীয়র জমির কর পরিশোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ইটাখোলা তহশিলদার অফিসে যাই। সেখানে যাওয়ার পর দুইটি জমির জন্য আলাদা দুটি রশিদ মূলে আমার কাছে ৪২০৫ টাকা চাওয়া হয়। টাকা পরিশোধ করার পর দেখি দুই জমির জন্য আমায় ৩ হাজার ৬০৫ টাকার রশিদ প্রদান করা হয়েছে। আমার কাছে অতিরিক্ত ৬০০ টাকা নেন। এটাই নাকি নিয়ম! '
অভিযোগের সূত্র ধরে ওই দিন বিকেলে অভিযোগকারীকে নতুন একটি জমির (হোল্ডিং) কর প্রদানের জন্য ফের নিয়ে যাওয়া হয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলের পর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র রায় করদাতা বেলালুল আমিনের কাছে ১ হাজার টাকা চান। কিন্তু ইটাখোলা মৌজার ৩৫ শতক জমির ১ বছরের জন্য ৭০০ টাকার রশিদ প্রদান করেন। ফের ৩০০ টাকা বেশী নিলে প্রতিবাদ করেন বেলালুল আমিন।
প্রতিবাদ করলে ওই কর্মকতা জানান, 'অন্যান্য অফিসে এর থেকে আরো বেশি টাকা নেয়া হয়। আমিই কম নেই। সবাই এটা জানে এবং দেয়ও।'
প্রতিবেদক ছন্মবেশে অভিযোগকারীর ভাইয়ের ছেলে হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ঘটনা অবলোকনের পর ওই ভূমি কর্মকতাকে রশিদের অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে প্রথমে তিনি অস্বীকার করেন, মোবাইল ফোন রেকর্ডিং এর কথা বললে তিনি স্বীকার করেন এবং প্রতিবেদক ও অভিযোগকারীকে অর্থের বিনিময়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য অনুরোধ জানান।
কথোপকথনের মাঝে ইটাখোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও জেলা আ'লীগের সহ-সভাপতি হাফিজুর রশিদ মঞ্জু ইউনিয়ন ভূমি সহকারী অফিসারের অফিসে উপস্থিত হয়ে প্রতিবেদকে উৎকোচ দেওয়ার কথা বলেন, সংবাদটি প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন। এবং অভিযুক্ত কর্মকর্তা ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ করবেন না বলে জানান তিনি।
ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের প্রতি রশিদে অতিরিক্ত ৩০০ টাকা নেওয়ার কথা জানালে নীলফামারী সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বেলায়েত হোসেন বার্তা২৪.কম-কে জানান, 'এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে ঘটনার সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানাব। '
রসিদে উল্লেখ না করে কর অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার বৈধতা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা এলিনা আক্তার বার্তা২৪.কমকে জানান, ' রসিদের অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার এখতিয়ার নেই ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার। অভিযোগ পেলে আইননুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমানের ফোনে একাধিকবার কল ও মেসেজ পাঠিয়ে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
উক্ত ইউনিয়ন ভূমি অফিসের মোট হোল্ডিং সংখ্যা ১১২৩২টি। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ টি হোল্ডিং এর বিপরীতে কর আদায় করা হয় এই অফিসে। এছাড়াও নীলফামারী জেলার অনেক ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বিভিন্ন কাজের জন্য জনসাধারণকে অযাচিত হয়রানির করা এবং অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার অভিযোগ রয়েছে।