৩৫ বছর ধরে বাড়ি-ঘর গিলে খাচ্ছে মেঘনা

, জাতীয়

হাসান মাহমুদ শাকিল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর | 2023-08-30 16:34:05

মেঘনা উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর। জেলা সদর, রায়পুর, কমলনগর ও রামগতি উপজেলাকে ঘিরে রেখেছে এ নদীটি। কিন্তু প্রায় ৩৫ বছর ধরে অব্যাহত ভাঙনে মেঘনা গিলে খাচ্ছে বাড়ি-ঘরসহ সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনা।

চলতি বছরও নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করায় এই মুহূর্তে দ্রুত বড় বড় জিওব্যাগ ডাম্পিং জরুরি।

জানা গেছে, সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়ন থেকে কমলনগর হয়ে রামগতি পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার এলাকা মেঘনা উপকূল। ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও ফসলি জমিসহ পুরো এলাকারই বিস্তীর্ণ অঞ্চল নদী ভাঙনে তলিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী বাজার, বাড়ি ও পূর্বপুরুষের কবর। দিন দিন বেড়েই চলেছে নদী ভাঙনের তীব্রতা। নদীতে জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। উপকূলে আঁচড়ে পড়া মেঘনার প্রতিটি ঢেউ সর্বনাশ করছে।

এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, কমলনগর উপজেলার চরকালকিনি ইউনিয়নের নাছিরগঞ্জ বাজারকে ভাঙন থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় একদল যুবক জঙ্গলা বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। ২৬ জুন থেকে এ বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে এখনো অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১ হাজার ফুট এলাকায় বাঁশের বেড়া, গাছ, কাঠ দিয়ে বাঁধ দেয়া হয়েছে। তবে এ বাঁধটি শুধু কমলনগরকে বাঁচাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনের খোরাক মাত্র।

কিন্তু মেঘনার তীব্রতায় যেকোনো সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে জঙ্গলা বাঁধটি। নদীর ভাঙন থেকে উপকূলকে বাঁচাতে প্রয়োজন স্থায়ী বাঁধের। জিও ব্যাগ ও ব্লকের মাধ্যমে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি উপকূলবাসীর। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

 জঙ্গলা বাঁধ দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা।

সূত্র জানায়, স্থানীয় যুবকদের জঙ্গলা বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছেন লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্যরা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছে নির্মাণ কাজ। ইতোমধ্যে আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য ও বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অবঃ) আবদুল মান্নান ২ লাখ টাকা সহায়তা করেছেন।

জানা গেছে, সদর উপজেলা থেকে রামগতি পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটারের মধ্যে ৫ কিলোমিটার এলাকায় নদীর তীর রক্ষা বাঁধ রয়েছে। কিন্তু অরক্ষিত ৩২ কিলোমিটার এলাকা ধীরে ধীরে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনকালীন জনপ্রতিনিধিরা নদী শাসনে কাজ করার কথা বললেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। গেল ঈদুল ফিতরের দুইদিন আগে চরফলকন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এর আগে বিদ্যালয় ভবনটির অর্ধেক নদীতে ভেঙে পড়ে।

অন্যদিকে রামগতি উপজেলার চররমিজ ইউনিয়নের বয়ারচরের টাংকি বাজার এলাকায় একটি বিশাল ঝাউ বাগান ছিল। ওই বাগানটি সবসময় পর্যটনমুখর ছিল।

স্থানীয়দের মতে, ২০১৯ সালের শেষের দিকে পুরো ঝাউ বাগানটি মেঘনার বুকে বিলীন হয়ে যায়। ঝাউ বাগানটি কেবলই স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে মানুষের মনে। টাংকি বাজার মাছঘাটটি জেলার বৃহৎ একটি ইলিশের হাট হিসেবে পরিচিত। ঘাটটিতে দিনে প্রায় আড়াই কোটি টাকার ইলিশ বিক্রি হয়। কিন্তু যেকোনো সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে ঘাটটি। ভাঙনে সদর উপজেলার বুড়ির খাল এলাকার অর্ধ-শতাধিক ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম নুরুল আমিন বলেন, জঙ্গলা বাঁধটি স্থায়ী সমাধান নয়। নদী ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ডাম্পিং ও ব্লকের মাধ্যমে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন, তিনি যেন একনেকের মাধ্যমে নদীর তীর রক্ষা বাঁধের জন্য বরাদ্দ দিয়ে কমলনগরকে রক্ষা করেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে একনেক সভায় কমলনগর-রামগতি রক্ষায় ৩৭ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প পাস হয়। প্রথম পর্যায়ে রামগতিতে সাড়ে ৪ এবং কমলনগর উপজেলায় ১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু রামগতি-কমলনগর রক্ষা প্রকল্পটি ২০১৭ সালের শেষের দিকে বাতিল করা হয়েছে। তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প জমা রয়েছে বলে জানা গেছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর