দুবাইয়ে পাঁচ তারকা হোটেলে চাকরি দেয়ার কথা বলে নারী পাচার!

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 12:32:30

দুবাইয়ে পাঁচ তারকা হোটেলে চাকরি দেয়ার কথা বলে নারী পাচারের অভিযোগে একজন গডফাদারসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল।

রোববার (১২ জুলাই) ১২ টার দিকে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সিআইডির ডিআইজি ইমতিয়াজ।

পাচারকারীরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নারীদের লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে তাদের অগ্রিম টাকা দিয়ে দুবাইয়ে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হতো। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে একজন গডফাদারসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- আজম খান ও তার দুই সহযোগী আল আমিন হোসেন ডায়মন্ড এবং আনোয়ার হোসেন ময়না।

ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আজম খানের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়িতে। তার বাবা দুবাইয়ে থাকতেন। তিনি ১৯৯৬ সালে দুবাইয়ে চলে যান। দুবাইয়ে তার চারটি তারকাযুক্ত হোটেলে অংশীদারিত্ব রয়েছে।

দুবাইয়ে পাঁচ তারকা হোটেলে চাকরি দেয়ার কথা বলে নারী পাচারের অভিযোগে একজন গডফাদারসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি

হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে  ফরচুন পার্ল হোটেল এন্ড ড্যান্স ক্লাব, হোটেল রয়েল ফরচুন, হোটেল ফরচুন গ্রান্ড এবং হোটেল সিটি টাওয়ারের অন্যতম মালিক। তিনি (আজম খান) গত আট বছর ধরে নারী পাচারের ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন।

সিআইডির ডিআইজি বলেন, কিছুদিন আগে দুবাই সরকারের অভিযোগের ভিত্তিতে আজম খানের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়। পরে তাকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। আজম খান দেশে এসে নতুন পাসপোর্ট তৈরি করে দেশের সীমান্ত এলাকা দিয়ে অন্য কোন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

সিআইডি জানায়, আজম খান এই নারী পাচার চক্রের মূল হোতা।  এসব হোটেলগুলোতে কাজের নামে বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশ থেকে পাচারকৃত অল্প বয়সী সুন্দরী তরুণীদের যৌনকাজে বাধ্য করা হতো।  আজম খানের সহযোগী আল আমিন হোসেন ওরফে ডায়মন্ড সহ আরো অনেক ড্যান্স প্রশিক্ষন দিয়ে তরুণীদের বিদেশে মোটা অংকের বেতনের প্রলোভন দেখাতো। পরে চাহিদামতো এসব তরুণীদের তারা দুবাইয়ে পাচারের ব্যবস্থা করত। সেখানে পৌছানোর পর আজম খানের মালিকানাধীন ড্যান্স ক্লাবগুলোতে আটক রেখে চলত যৌন নির্যাতন ও নিপীড়ন।  তাদেরকে (ভুক্তভোগী) মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন দেয়ার কথা বললেও তাদেরকে কোন টাকা দেওয়া হতো না।

এসব ঘটনায় আসামিদের জড়িত থাকার সকল অডিও ক্লিপ সংগ্রহ করেছে সিআইডি।  আজম খান গত আট বছর ধরে প্রায় এক হাজার তরুণীকে দুবাইয়ে পাচার করেছে। 

ইমতিয়াজ আহমেদ আরো বলেন, আজম খানের বাংলাদেশে ৫০ জনের মত দালাল (ট্রাভেল এজেন্সী) এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তিনি ওই দালালদের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অল্প বয়সী নারীদের বিদেশে ভালো চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখাত। পরে তাদের ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মত দিয়ে দুবাইয়ে নিয়ে তার বিভিন্ন হোটেলে চাকরি দিত।

এক পর্যায়ে তাদেরকে তার ড্যান্স বারে নাচার জন্য বলত। কোন কোন সময়ে তাদের হোটেলে ওই তরুণীদের দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হতো। ওই নারীরা রাজি না হলে তাদেরকে খেতে না দিয়ে মারধোর করে আবার কোন কোন সময়ে তাদেরকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হতো।  

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, অপরাধে যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে তার সবকিছুর মধ্যেই তিনি (আজম খান) জড়িত।  বাংলাদেশেও আজম খানের বিরুদ্ধে ১৫ টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে ছয়টি হত্যা মামলা। তার বিরুদ্ধে গত ২ জুলাই সিআইডি বাদী হয়ে লালবাগ থানায় একটি মামলা করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর