চ্যালেঞ্জে টিকাদান কর্মসূচি

, জাতীয়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 19:34:48

করোনার কারণে প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে টিকাদান কর্মসূচি। মহল্লার নির্দিষ্ট বাড়িতে বসতো স্যাটেলাইট ক্যাম্পগুলো। এই পরিস্থিতিতে এখন অনেক বাড়ির মালিক ক্যাম্প বসতে দিচ্ছেন না, আবার করোনা সংক্রমণের ভয়ে মহিলারাও অনেকে টিকা নিতে আসতে চাইছে না।

যে টিকার কল্যাণে সারাবিশ্ব থেকে ভ্যাকসিন হিরো থেকে এতো এতো পুরস্কার সবটাই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। টিকায় ঝরে পড়া ও প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির সংখ্যা কমে যাওয়ায় খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দ্রুত ঝরে পড়া সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।

মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা বলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে পুরো সিস্টেম এলোমেলো হয়ে গেছে। নতুন করে পরিকল্পনা সাজাতে হচ্ছে। এপ্রিল-মে মাসে ঝরে পড়া বেড়ে গেলেও এখন অনেকটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (৬, ৭ ও ৮) মিরপুর এলাকায় কর্মরত আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট-২। সংস্থাটির কোয়ালিটি এমআইএস এন্ড কোয়ালিটি আসিউরেন্স অফিসার নজরুল ইসলাম ভূইয়া লিটন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমি ২০ বছর যাবৎ টিকাদান কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত। অতীতে কখনও এমন নানামুখী প্রতিকূল পরিবেশ ফেস করতে হয়নি।

স্যাটেলাইট ক্যাম্পের জন্য নির্দিষ্ট কিছু বাড়ি ও ক্লাব ব্যবহার করা হতো। আমাদের এলাকায় ৩৮টি পয়েন্টে স্যাটেলাইট ক্যাম্প পরিচালনা করা হতো। যেখানে আমাদের কর্মীরা গিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে বসতেন, শিশু ও গর্ভবতী মা এসে ফ্রি টিকা গ্রহণ করতেন। করোনা আসার পর এপ্রিলে ক্যাম্পগুলো বন্ধ করা হয়। মে মাসে যখন চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হলো তখন সঙ্গতকারণেই বাড়ির মালিকরা আপত্তি জানাতে থাকলেন। আমরা বাধ্য হয়ে বিকল্প উপায়, ক্লাব ও বিভিন্ন সংগঠনের অফিস ব্যবহার শুরু করেছি। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত স্থানে পাওয়া যায়নি। যে কারণে সেবা প্রদান চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

তিনি বলেন, এপ্রিলে প্রায় ১৪ শতাংশের মতো ড্রড-আউট তৈরি হয়। কর্মীদের কঠোর পরিশ্রমে জুনে ড্রপ-আউট কমে ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। ধীরে ধীরে মানুষের মন থেকে করোনা আতঙ্ক কমে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি চলতি মাসেই শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি আমরা।

এই এলাকায় ১৭টি ঘনবসতিপূর্ণ বস্তি অবস্থিত। এসব বস্তিতে ৮৪ হাজার ৯৬৯ জন লোক বসবাস করে। তাদের অনেকের মধ্যে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। কেউ কেউ ঢাকায় কাজ না থাকায় গ্রামে ফিরে গেছেন। সব মিলিয়ে স্রোতের উল্টো দিকে চলছে মা ও শিশুর টিকাদান কর্মসূচি। ঢাকার বাইরের চিত্রও অনেকটা অভিন্ন। টিকা নিতে এসে সংক্রমণের ভয়ে অনেকে এড়িয়ে চলছেন।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু বলেছেন, করোনার কারণে বাড়িতে গিয়ে সেবা প্রদানের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়ায় ৩ হাজার ৫৩২ জন ট্রেন্ট ভলান্টিয়ার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা পাহাড়ি ও দুর্গম অঞ্চলে বাড়িতে গিয়ে এই সেবা প্রদান করছে। সক্ষম দম্পতিরা যাতে এই সময়ে সন্তান গ্রহণ না করেন যে জন্য ব্যাপক ক্যাম্পেইন করা হযেছে। তারপরও যারা গর্ভধারণ করছেন তাদেরকে অন্তত চারবার পরীক্ষা করার বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি বাড়ানোর জন্য পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। ১০৫টি ডেডিকেটেড হটলাইন রয়েছে। যার মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি সেবার বিষয়ে পরামর্শ নিতে পারছেন। ৩৫টি জোনে অডিও ভিজিওয়ালের মাধ্যমে প্রচার চালানো হচ্ছে।

প্রসূতি মায়ের সেবা নিশ্চিত করার জন্য, ২৪ ঘণ্টা সপ্তাহে সাতদিন সেবা অব্যাহত রয়েছে। করোনাকালেও এই সেবা অব্যাহত রাখা হয়েছে। কিশোর কিশোরীদের সেবা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ফোন কলের মাধ্যমে এই সেবা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ফোন কলের মাধ্যমে সেবা গ্রহীতার হার অনেক বেড়েছে। ৬ হাজার ৪’শ সেবা কেন্দ্রে কিশোর কিশোরীদের সেবা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৈশোরবান্ধব এসব কেন্দ্র আরও বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা নিবেদিত হয়ে সেবা সম্প্রসারণ করবো। সাধারণ জনগণের প্রতি অনুরোধ, আপনারা আমাদের সেবা গ্রহণ করুন। বাল্য বিয়ে বন্ধ করুন, পরিকল্পিত পরিবার গড়ে তুলুন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর