তিস্তার পানির স্রোতে লন্ডভন্ড দহগ্রাম

, জাতীয়

নিয়াজ আহমেদ সিপন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লালমনিরহাট | 2023-08-27 08:51:28

বহুল আলোচিত বাংলাদেশি ভূখণ্ড দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা। তিন দিকে ভারত এক দিকে তিস্তা নদী বেষ্টিত ২১.৮০ বর্গমাইলের দহগ্রাম ইউনিয়ন। পূর্বদিকে বাংলাদেশিদের মূল ভূখণ্ড আসার একমাত্র পথ বিএসএফের নিয়ন্ত্রণাধীন তিনবিঘা করিডোর। দহগ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে বয়ে যাওয়া সীমান্তের ওপারের মেখলিগঞ্জ দিয়ে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রামে প্রবেশ করেছে ভারতের সিকিমে উৎপত্তি হওয়া নদী তিস্তা। আর এই নদীটি লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার ওপর দিয়ে চলে গেছে কুড়িগ্রাম জেলায়। যার কারণে বন্যা হলেই প্রথম ধাক্কা সহ্য করতে হয় দহগ্রামকে।

রোববার (১২জুলাই) রাত ৯টায় হঠাৎ করে ভারতের গজলডোবা ব্যারেজের গেট খুলে দেয়া হয়। এতেই তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে দহগ্রামের তিনটি ওয়ার্ডের তীরবর্তী এলাকা বন্যার পানিতে ভেসে যায়। ফলে শত শত পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই, বসতভিটা, আবাদী জমি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়। তিস্তা নদী ভারতীয় অংশে ভাঙছে না, অনবরত ভাঙছে বাংলাদেশি অংশে। ফলে বিলীন হচ্ছে দহগ্রাম আঙ্গরপোতার বিস্তীর্ণ এলাকা। এখানকার সর্বস্ব হারানো পরিবারগুলো দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন জানিয়েছেন।

বাঁধ ভেঙে ঘূর্ণিঝড় মতোই প্রবল স্রোতে পানি ডুকে ঘরবাড়ি, বিদ্যুতের ঘুটি, পাকা রাস্তাসহ ফসলি জমি বিলীন হয়ে যায়

সরেজমিনে জানা গেছে, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ এলাকার সবগুলো গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। আর এতেই পানির গতি পরিবর্তন হয়ে দহগ্রামের সর্দারপাড়া নামক এলাকায় ঢুকে পড়ে। দহগ্রামের ৩টি ওয়ার্ড লন্ডভন্ড করে ফেলে। তিস্তা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠায় পানি উন্নয়ন বোর্ড রোববার রাতেই বিশেষ সতর্কতা জারি করে। লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতেও মাইকিং করা হয়। হাতীবান্ধা-বড়খাতা বাইপাস সড়কে পানির চাপ ঠেকাতে এলাকার লোকজন বালির বস্তা ফেলে। এ সময় নদীর পানি উপচে তীরবর্তী এলাকাগুলোকে প্লাবিত করে, ভাসিয়ে নিয়ে যায় মানুষের বাড়িঘর-বসতভিটা। আবার বানের পানি নামতে না নামতে শুরু হয় আগ্রাসী ভাঙন।

যে দিক দিয়ে পানি চলে গেছে সব ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে

বাঁধ ভেঙে পথ পরিবর্তন করে ঘূর্ণিঝড় মতোই প্রবল স্রোতে পানি ঢুকে ঘরবাড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি, পাকা রাস্তাসহ ফসলি জমি বিলীন হয়ে যায়। ভাঙনের শিকার মানুষগুলো বসতভিটা-আবাদী-জমিসহ সবকিছু হারিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে বাঁধ, রাস্তা বা অন্যের জমিতে।

হাসিনা বেগম নামে এক ভুক্তভোগী জানান, তিস্তার পানি এসেই এভাবে বাড়ি ঘরসহ সব কিছু ভেঙে নিয়ে চলে যাবে এটা কোনদিন ভাবতে পারি নি। ৩০ বছরেও এমন বন্যা আমার চোখে পড়েও নি। মনে হয়েছে এটি একটি ঘূর্ণিঝড়। যে দিক দিয়ে পানি চলে গেছে সব ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের কিছু চাওয়ার নেই, শুধু একটি বাঁধ নির্মাণ হলেই দহগ্রামের মানুষ সব কিছুই থেকে রক্ষা পাবে।

প্রতি বছরে দহগ্রামই তিস্তার ভাঙনে ছোট হয়ে যাচ্ছে

দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, প্রতি বছরে দহগ্রামই তিস্তার ভাঙনে ছোট হয়ে যাচ্ছে। তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নিলে দহগ্রাম ইউনিয়নটি বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে। তাই বাংলাদেশের এ ভূখণ্ডটির অস্তিত্ব রক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসার আবেদন জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর