আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরিতে বাধা বাঁশের সাঁকো

খুলনা, জাতীয়

আশরাফুল ইসলাম নূর, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 16:28:12

 

খুলনা: ‘বাঁশের সাঁকো পার হয়ে যাতয়াত করতে হয় বলে এলাকায় কেউ ছেলে-মেয়ে বিয়ে দেয় না। নতুন আত্মীয়তা সৃষ্টি তো দূরের কথা; সম্পর্ক ছিন্ন হবার অনেক ক্ষেত্রেই দায়ী আটলিয়া ও শোভনা ইউনিয়নের এ সংযোগ সাঁকোটি। ভোট আসলে ইউপি চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে মন্ত্রী পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি দেন; কিন্তু পাঁচ গ্রামের ১০ হাজার অধিবাসীর সাঁকো অভিশাপ মোচন হয় না।’

ক্ষোভ ও হতাশায় কথাগুলো বলছেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বাগাচড়া গ্রামের বাসিন্দা গাজী আলী বাদশা। তবে এ আক্ষেপ শুধু আলী বাদশার নয়; কুলবাড়িয়া, বাগাচড়া, বাদুরগাছা, মনহরপুর, বয়ারশিং ও মাদারতলা গ্রামবাসীরও।

খুলনার সর্ববৃহৎ উপজেলা ডুমুরিয়া সদর থেকে ১৫কি.মি ভিতরে তেলিগাতী নদীর শাখা আড়োখালী নদীতে স্বউদ্যোগে নির্মিত বাঁশের সাঁকোতে যাতয়াতের একমাত্র মাধ্যম এলাকাবাসীর। তাদের দুর্ভোগ অনুধাবন করে ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় (খুলনা-৫) সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণি সম্পদমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ ডিও লেটার দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। তাতেও কষ্টলাঘব হয়নি এলাকাবাসীর।

বাঁশের সাঁকোতে কুলবাড়িয়া বিকেএমএস নিম্নে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাগআচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পল্লী শ্রী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পল্লী শ্রী মহাবিদ্যালয়, কাঠালতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বয়ারশিং প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষার্থীরা যাতয়াত করে।

ফলে প্রতিনিয়তই ঘটে দুর্ঘটনা। সাঁকো থেকে পড়ে গেলে সেদিন আর স্কুলে যাওয়া হয় না। গ্রামের ছেলে-মেয়ে সাঁতার পারে বলেই জীবনে রক্ষা বললেন বাগআচড়া গ্রামের বাসিন্দা ফুলতলা কলেজের প্রভাষক নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল। আরও বলেন, ‘দেশে যে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে তা আমাদের এলাকার মানুষ বিশ্বাস-ই করতে চায় না! পদ্মানদী মাঝি’র উপ্যানাসের মতো তাদের বক্তব্য, ‘ঈশ্বর থাকেন ওই ভদ্রপল্লীতে, এখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।’

একই এলাকার বাসিন্দা কাঠালতলা বরাতিয়া কওমী মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি মাহমুদুল হাসান বলেন, “যাতয়াতের কষ্টের কথা বলতে চাই না; আমরা সামাজিকভাবে যে কতটা অবহেলিত তা বোঝাতে পারবো না। ভৌগলিক অভিশাপে আমরা যেনো অচ্ছুত্য প্রাণি!”

জানা গেছে, প্রতিনিয়ত ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে সাঁকো পারাপারে। গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের কোন উদ্যোগে ছোঁয়া লাগে ওই এলাকায়। বছরখানেক আগে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়েছে এলাকা। তবে ভারী-মাঝারী যানবাহন তো দুরের কথা মোটরসাইকেল চলাচল করেনি ওইসব এলাকাতে। যাতয়াতের সমস্যার কারণে কুলবাড়িয়া মৎস্য আড়তে অল্প দামে পাওয়া যায় নদীর মাছ; তাতে অবশ্যই জেলেপল্লীর দুঃখ-দুর্দশা বাড়ে বৈকি কমে না!

খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ, উপজেলা চেয়ারম্যান খান আলী মুনসুর, শোভনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত বৈদ্য ও আটলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট প্রতাপ কুমার রায় বললেন একই কথা। “চেষ্টা চলছে, দ্রুত ব্রীজ হবে ওখানে।”

এ সম্পর্কিত আরও খবর