বাংলাদেশের আম শোভা পাচ্ছে সুইজারল্যান্ডের বাজারে। দীর্ঘ ২০ বছর যাবত সুইজারল্যান্ডে বসবাসকারী এক প্রবাসী জেনেভাস্থ একটি দোকানে ‘বাংলাদেশি ম্যাঙ্গোস’ লেখা মোড়ক দেখে আনন্দ চিত্তে ক্রয়পূর্বক এক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন ‘যে আমের স্বাদ প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম এ দেশে এসে, বাংলাদেশ মিশন তার স্বাদ নেয়ার সুযোগ করে দেয়ায় আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ’।
প্রায় বছর খানেক পূর্বে জেনেভাস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন প্রচেষ্টাটি শুরু করে। আমের মান নিবিড় পর্যালোচনা করা হয় সুইস বাজারে। সার্বিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ দেশের মানুষের ভোগকৃত ফলমূল ও সবজির প্রায় অর্ধেকের মত পণ্য আমদানিকৃত।
বিগত বছরগুলোতে দেশটিতে আমের চাহিদা ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। যার অধিকাংশই আমদানি করা হয় দক্ষিণ আমেরিকান দেশসমূহ থেকে। তাই বাংলাদেশের আম রফতানির বিষয়টি মাথায় রেখে সুইস বাজারে খুচরা বিনণনকারীদের কাছে পণ্য সরবরাহ করে এবং বাংলাদেশ থেকে আমসহ অন্যান্য ফলমূল ও সবজি আমদানি করতে আগ্রহী এমন প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ীর সঙ্গে রফতানিকারকদের যোগাযোগ স্থাপনে মিশন সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। একইসাথে, সুইস বাজার ব্যবস্থা সংক্রান্ত তথ্য, কৃষিপণ্য তথা আম আমদানিতে বিধিবিধান, পণ্যের গুণাগুণ, প্যাকেজিং, লেবেলিং ইত্যাদি তথ্য আগ্রহী রফতানিকারকদের সরবরাহ করার পাশাপাশি বাংলাদেশ দূতাবাস অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে থেকে।
উল্লেখ্য, প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন পরিবারের এ দেশটিতে প্রত্যেকে আয়ের গড়ে প্রায় শতকরা ১০.৫ ভাগ ব্যয় করে খাবার ও পানিয় ক্রয়ে। সুইস সরকারকে এজন্য প্রতি বছর গড়ে ১.৭ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক ব্যয় করতে হয় ফলমূল ও সবজি আমদানিতে। বিপণন ব্যবস্থায় পাশ্চাত্যের অন্যান্য দেশের মত সুইস বাজারেও বৃহৎ চেইন শপে’র আধিপত্য রয়েছে। তবে এদেশের ব্যবসায়ীদের প্রায় শতকরা ৯৯ ভাগ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা এবং খুচরা বিপণি বিতানের প্রতি রয়েছে অভিবাসীদের বিশেষ আকর্ষণ।
সাধারণত মুক্তবাজার অর্থনীতির বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় সুইজারল্যান্ডের মত উন্নত দেশে ব্যবসায়িক গোপনীয়তার জন্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষত তাদের কর্ণধারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ দুরূহ হলেও প্রাথমিকভাবে দু’জন সুইস আমদানিকারকের সঙ্গে মিশন সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হয়।
সে মোতাবেক বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুরূপ আগ্রহী ব্যবসায়ীর তালিকা পাওয়ার পর গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে সুইস আগ্রহী আমদানিকারকের কাছে তা সরবরাহ করা হয়। কিন্তু তখন বাংলাদেশের আমের মৌসুম না থাকায় বিষয়টি এবছরের জন্য মিশনের অগ্রাধিকারমূলক কর্মতালিকাভূক্ত করা হয়।
চলতি বছরে আমের মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই বাংলাদেশের আমসহ ও অন্যান্য পণ্য রফতানি বৃদ্ধি বেগবান করতে মিশন সক্রিয় থাকে। সকল প্রক্রিয়া শেষে গত ১৪ জুলাই কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে পৌঁছে বাংলাদেশের আম ‘আম্রপালি’। বিশ্বের প্রায় সকল দেশের কূটনীতিকদের মিলনস্থান জেনেভায় ’আম্রপালি’ এখন কূটনীতিকসহ সকল সুইসবাসীকে পৌঁছে দিচ্ছে বাংলাদেশের শুভেচ্ছা বার্তা।
আম রফতানির এই সার্বিক প্রক্রিয়ায় নিবিড় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন জেনেভাস্থ বাংলাদেশ মিশনের মান্যবর রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান। এ বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন ‘কোভিড-১৯ এর ক্রান্তিকালে সুইজারল্যান্ডের মত বাজারে বাংলাদেশের আম আমদানির এই শুভ সূচনা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। গতানুগতিক পণ্যের বাইরে বাংলাদেশের রফতানি পণ্য তালিকায় ‘আম্রপালি’ শুধু এক বৈচিত্র্যের সূচনা নয়, এটি বাংলাদেশি উৎপাদনকারীদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতায়ও অবদান রাখবে’।
এসময় তিনি পণ্য মান ও গুণাগুণ বজায় রেখে স্থাপিত ব্যবসায়িক সম্পর্কটি পারস্পারিক আস্থা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে ধরে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আহ্বান জানান।