১০ বার বাড়ি সরিয়েও রক্ষা হলো না আহাতন বেওয়ার

, জাতীয়

অভিজিৎ ঘোষ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, টাঙ্গাইল | 2023-08-27 14:38:25

বন্যা ও নদী ভাঙনে ১০ বার বাড়ি সরিয়েছেন। ভিটা-বাড়ি হারিয়ে এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নের সড়কের ঢালে ও সরকারি জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন কিন্তু তাতেও রক্ষা হলো না তার। বন্যার পানি প্রবেশ করে ঘর তলিয়ে গেছে। ছেলে ও ছেলের বউরা সড়কের ওপর আশ্রয় নিলেও তিনি মাচাঁ উঁচু করে বাড়িতেই থাকছেন।

বলছিলাম টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের জিগাতলা গ্রামের আহাতন বেওয়ার কথা। সপ্তাহখানেক হল বন্যার পানিতে ভাসছেন তিনি। কিন্তু ত্রাণ সহায়তাতো দূরের কথা কেউ দেখতে পর্যন্ত আসেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার যমুনা বিধৌত ইউনিয়ন গাবসারা ইউনিয়নসহ গোবিন্দাসী, অজুর্না ও নিকরাইল ইউনিয়নে শতাধিক গ্রাম যমুনা নদীর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর ফসল। বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদি পশু নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়া জায়গায়তেও পানি উঠে পড়েছে। মানবেতর জীবন-যাপন করছে বন্যার্তরা। অনেকেই আবার বঙ্গবন্ধু সেতু রক্ষাগাইড বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন।

জানা গেছে, যমুনা নদীর পানি কিছুটা কমে বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় প্লাবিত হয়েছে এই উপজেলার কয়েকশ গ্রাম। এতে চরম কষ্টে দিন-রাত পার করছেন বন্যা কবলিতরা। গো-খাদ্যে, বিশুদ্ধ পানি, শুকনা খাবার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে বন্যার্ত এলাকাগুলোতে। এদিকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের কয়েকটি স্থানে লিকেজ দেখা দিয়েছে।

এছাড়া উপজেলার তারাই এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রাথমিক জিও ব্যাগ ফেলে সংস্কার কাজ করছে। এছাড়া নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করায় বেশ কিছু এলাকার কাঁচা-পাকা সড়ক ভেঙে গেছে। উপজেলার গোবিন্দাসী-ভালকুটিয়া রাস্তার চারটি অংশে ভেঙে যায় কয়েক গ্রামের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বিকল্প হিসেবে ওই গ্রামের মানুষজন নৌকাযোগে যমুনা নদী হয়ে গন্তব্যস্থলে যাচ্ছেন।

বন্যায় তলিয়ে আছে নিম্নাঞ্চলের বাড়ি-ঘর

উপজেলা প্রশাসন চলতি বর্ষা মৌসুমে বন্যা পরিস্থিতিতে খাদ্য সহায়তা ও বন্যার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য বিভিন্ন দপ্তরের সাতজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়ে হটলাইন চালু করা হয়েছে।

অন্যদিকে গত শুক্রবার (১৭ জুলাই) বিকেলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আতাউল গনি ভাঙন ও বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন।

গোবিন্দাসী ইউনিয়নের জিগাতলা গ্রামের আহাতন বেওয়া, সমেলা ও বাবলুসহ অনেকেই বলেন, বন্যার পানিতে ভাসছি কয়েকদিন হলো। কেউ খোঁজ নেয়নি। কোন ত্রাণ সহায়তা পাইনি। থাকার মতো কোনো জায়গাও নেই যে কোথাও গিয়ে থাকব। সাপ ও পোকা মাকড়ের ভয়তো আছেই।

গোবিন্দাসীর ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে ৪ শতাধিক পরিবার রয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত। অথচ গেল বন্যায় দশ কেজি চালের ১৩টা টোকেন পেয়েছিলাম। বন্যায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে গেছে। এতে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।’

উপজেলা কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও তথ্য সেবা কর্মকর্তা জলি রানী দাস বলেন, ‘পুরো উপজেলার তথ্য নেই। কয়েকটি ইউনিয়নের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর