কোরবানির হাট মাতাবে ‘বাংলার বস’ ‘বাংলার সম্রাট’

, জাতীয়

জাহিদ হাসান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, যশোর | 2023-09-01 00:57:19

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কোরবানির পশুর হাট কতটুকু জমবে তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তবে এসব দুশ্চিন্তা পাশ কাটিয়ে যশোরে এবার বড় তারকা হিসেবে আলোচনায় রয়েছে ‘বাংলার বস’ ও ‘বাংলার সম্রাট’। এ গরু দুটি দিয়েই কোরবানির পশুর হাট বাজিমাত করার স্বপ্ন দেখছেন খামারি আসমত আলী গাইন।

বিশাল আকারের দুই ষাঁড়কে মোটাতাজা করে প্রস্তুত করেছেন কোরবানির জন্য। খামারি আসমত আলী গাইন যশোরের মণিরামপুর উপজেলার হুরগাতি গ্রামের মৃত রজবআলী গাইনের ছেলে। এবারের কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে ‘বাংলার বস’ ও ‘বাংলার
সম্রাট’ নামের দুটি গরু পালন করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন তিনি। এ দুটি গরু দেখতে প্রতিদিন তার বাড়িতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ভিড় করছেন।

দুই গরুর দাম হাঁকিয়েছেন ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে বড় হাতির সমান বাংলার বসের দাম নির্ধারণ করেছেন ৫০ লাখ টাকা। ব্যাপারীরা ৩০ লাখ পর্যন্ত দাম উঠিয়েছেন। আর সম্রাটের দাম হাঁকিয়েছেন ৩০ লাখ টাকা। তবে ব্যাপারীরা সম্রাটের দাম বলছে ১৫ লাখ টাকা।

বাংলার বস এখন পর্যন্ত দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় গরু দাবি খামারি আসমত আলী গাইনের। ব্যাপারীরা গরুর দাম ৩০ লাখ টাকা বললেও ৫০ লাখ টাকায় নিচে বিক্রি করতে চান না তিনি।

সরেজমিনে যশোরের মণিরামপুরে হুরগাতি গ্রামে হাসমতের বাড়িতে গিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নারী-পুরুষের ভিড় চোখে পড়ে। এগিয়ে যেতেই জানা যায়, উৎসুক জনতা আসমতের গরু দেখতে এসেছেন। গত ২৫ বছর ধরে তিনি মীম ডেইরি ফার্ম নামে দুধের গাভী পালন করে আসছিলেন। শখের বশে তিনটি উন্নত জাতের গরু কিনে সুষম
খাদ্য, উপযুক্ত চিকিৎসা, নিয়মিত পরিচর্যা করে সফল হয়েছেন।

তার দাবি, ‘বাংলার বস’ নামের গরুটির ওজন প্রায় ৬৫ মণ। অবশ্য গরু পালনে আকাশচুম্বী এ সফলতায় উপজেলার প্রাণিসম্পদ অফিসের কোন সহায়তা পাননি বলে হাসমতের অভিযোগ।

গরু দুটি দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন উৎসুক জনতা

খামারি আসমত আলী গাইন বার্তা২৪.কম-কে জানান, প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে শত শত লোক গরু দুটি দেখতে তার বাড়িতে ভিড় করছেন। বাংলার বস নামের ষাঁড়টি ব্রিটিশ ফ্রিজিয়ান জাতের। গেল কোরবানির ঈদের কয়েকদিন আগে যশোরের নিউমার্কেট এলাকার হাইকোর্ট মোড়ের ব্যবসায়ী মুকুলের কাছ থেকে গরুটি ১৭ লাখ টাকায় কেনেন। আর বাংলার সম্রাট কেনেন ৮ লাখ টাকায়। দানাদার ও লিকুইড খাদ্য হিসেবে খৈল, গম, ভুট্টা, বুট ও ছোলার ভুষি, চিটাগুড়, ভিজানো চাল, খুদের ভাত, খড়, নেপিয়ার ঘাস ও কুড়া মিলে দিনে দুইবার মোট ৮০ থেকে ৯৫ কেজি খাদ্য খাওয়ানো হয়। এছাড়া তিনি প্রশিক্ষণ নেয়ায় নিজেই তার গরুর চিকিৎসা দেন।

আসমত আলী ‘বাংলার বস’ গরু নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, ‘তিনি নিশ্চিত দেশের মধ্যে এ যাবতকালের মধ্যে সব থেকে বড় এবং এর ওজন এখন ২৬০০ কেজি অর্থাৎ
প্রায় ৬৫ মণ। এ ওজনের গরু বা ষাঁড় এর আগে বাংলাদেশে কখনো হয়নি।’

তবে আসমত ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘এ পর্যন্ত প্রাণিসম্পদ অফিসের কোনো সহযোগিতা এমনকি কোনদিন তারা খামার পরিদর্শন করেনি।’

তবে এখন ‘বস’ আর ‘সম্রাটকে’ কার হাতে তুলে দেবেন, ন্যায্য মূল্য পাবেন কিনা এ নিয়ে তিনি শঙ্কায় রয়েছেন।

যশোর শহরের ব্যবসায়ী মাহফুজুর রহমান জানান, লোকে মুখে শুনেছেন মণিরামপুরে বাংলার বস ও বাংলার সম্রাট নামে দুটি গরু রয়েছে। এমন হাতির মত গরু তার জীবনে কখনো দেখেননি।

ভোজগাতি গ্রামের সালাম বিশ্বাস জানান, তার ৮০ বছর বয়সে এত বড় গরু দেখেননি। একই কথা জানান গরু দেখতে আসা উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের আমিনপুর গ্রামের শাহেরা বেগম, জয়পুর গ্রামের আকতার আলী।

উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসার আবুজার সিদ্দিকী জানান, এমন বড় গরুর বিষয়ে তিনি শুনেছেন। তিনি না যেতে পারলেও অফিসের লোকজনের সাথে খামারির নিয়মিত যোগাযোগ হয় বলে তিনি দাবি করেন।

জেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাণীসম্পাদ কর্মকর্তা শফিউল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে দেশে বন্ধ হয়ে যায় ভারত থেকে গরু আসা। এতে করে পশু পালনে আগ্রহী হন দেশীয় খামারিরা। বাড়ি বাড়ি গড়ে ওঠে ছোট বড় গরু ছাগলের খামার। তেমনি একজন খামারি যশোর মণিরামপুরে আসমত আলী গাইন। প্রতিবছর ঈদকে সামনে রেখে ৬ থেকে ৭টি গরু পালন করেন। এর মধ্যে শখের বসে বড় জাতের দুটি গরু পালন করেছেন। বড় গরুতে ঝুঁকি থাকায় আমরা খামারিদের মাঝারি গরু লালন-পালন করতে উদ্বুদ্ধ করছি।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর