ঝালমুড়িওয়ালা আবুলকে নিয়ে কেন এতো কৌতুহল?

জেলা, জাতীয়

হাসান মাহমুদ শাকিল, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 01:43:12

লক্ষ্মীপুর: আবুল কালাম। প্রায় ৪৬ বছর বয়স তার। পেশায় তিনি ঝালমুড়ি ব্যবসায়ী। পাড়া-মহল্লা ও হাট-বাজারে ঘুরে ঘুরে তিনি এ ব্যবসা করে আসছেন। বাহারি ডিজাইনের পোশাকে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন স্থানে তাকে দেখা যায়। দু’পায়ের ঘুঙুরের শব্দে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা মুড়ি কিনতে দৌড়ে চলে আসে তার কাছে। আবার অনেকে কৌতুহল বসত দেখার জন্য ছুটে আসেন। লক্ষ্মীপুর-মজু চৌধুরীর হাট সড়কের যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সামনে মুড়ি বিক্রি অবস্থায় তার সঙ্গে দেখা হয়।

জীবনের তাগিদে মানুষকে অনেক ধরনের কাজ করতে হয়। নানান জন নানা পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। পুঁজিগত সুবিধা অনুযায়ী কাজ বেছে নেন মানুষ। ঠিক তেমনি স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করে আসছেন আবুল কালাম। বিভিন্ন হাট-বাজার ও পাড়া-মহল্লায় গিয়ে তিনি ঝালমুড়ির ব্যবসা করছেন। প্রায় ৩৪ বছর তিনি এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

কালাম লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার শাকচর ইউনিয়নের কাদিরা গোজা এলাকার মৃত বিরিজ আলী সর্দারের ছেলে। তার এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। তারা স্থানীয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে।

প্রতিদিন লাল, নীল, হলুদ সবুজ রঙের বাহারি ডিজাইনের পোশাকে সজ্জিত হয়ে ঘর থেকে বের হন কালাম। তার দু’পায়ে ঘুঙুর ও কাঁধে থাকে ঝুলানো রঙিন বাক্স। এ বাক্সে থাকে ঝাল মুড়ি বানানোর রসদ।

তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভাবের তাড়নায় ১২ বছর বয়সে আবুল কালাম কাঁধে ঝুলান ঝালমুড়ির বাক্স। এরপর থেকে আর কখনো অন্য কোনো কাজ করেননি। এ দিয়েই জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। শুরু থেকে এটি তার উপার্জনের মাধ্যম। প্রথমে লক্ষ্মীপুরে ব্যবসা করলেও পরে তিনি ঢাকায় চলে যান। প্রায় ১৫ বছর আগে তিনি ঢাকার মীরপুর এলাকায় রাস্তায় হেঁটে হেঁটে এ ব্যবসা করতেন। মীরপুর শাহ আলীর দরবারের পাশে একটি বস্তিতে ছিল তার বাস। সেখানে তিনি বিয়েও করেন। বিয়ের এক বছর পর তাদের ঘরে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। পরে সে মারা যায়। এর কয়েক মাস পর স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে যায়। কিছুদিন পরই তার জমানো লক্ষাধিক টাকা ছিনতাইকারীরা নিয়ে যায়। সে থেকে তিনি ঢাকা ছেড়ে এখন লক্ষ্মীপুরে ব্যবসা করছেন। এখানে তিনি পুনরায় বিয়ে করেন। তিনি এখন তিন সন্তানের বাবা।

বাহারি ডিজাইনের পোশাকের বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কালাম বলেন, ‘আমি আরও দুটি পোশাক সেলাই করতে দিয়েছি। এ রকম পোশাক পড়লে ক্রেতা বেশি পাওয়া যায়। পাড়া-মহল্লা ও বিভিন্ন হাট বাজারে গেলে ঘুঙুরের শব্দে উৎসুক জনতা আমার চারপাশে ভিড় জমায়। শিশু, কিশোর-যুবক ও বয়স্করাও কৌতুহলী হয়ে আমাকে দেখতে আসে। তখন ব্যবসা ভালো হয়।’

তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এখন তার ব্যবসা ভালো হচ্ছে না। আগে যেখানে এক-দেড় হাজার টাকার মুড়ি বিক্রি করা যেত। এখন পাঁচ-ছয়শ টাকার বেশি হয় না। যা যাতায়াত ভাড়া ও মুড়ি বানানোর পণ্য কিনলে দু’একশ টাকার বেশি থাকে না।‘

এ সম্পর্কিত আরও খবর