করোনা সংক্রমণ রোধে এবার পশু কেনাবেচায় অনলাইন প্লাটফর্ম কার্যকর মাধ্যম হিসেবে গড়ে উঠছে। এটি শুধু শহর নয় গ্রামেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এতে একদিকে মানুষের সমাগম রোধ হচ্ছে অন্যদিকে খামারিও সঠিক দাম পাচ্ছেন। রাজধানীর ঢাকার মতো সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের যৌথ উদ্যোগে সাতক্ষীরার ৭টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের নিরলস পরিশ্রমে জমে উঠেছে সাতক্ষীরার অনলাইন কোরবানির পশুর হাট।
করোনার সংক্রমণ কমাতেই মানুষকে হাটে না গিয়ে কোরবানির পশু ক্রয়ের সুযোগ দিচ্ছে এই অনলাইন মার্কেটপ্লেস।
অনলাইনে যেভাবে পশু কেনাবেচা হচ্ছে- অনলাইনে মার্কেটপ্লেস একটি ওয়েবসাইটে ক্লিক করে বাসায় বসেই বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম, ওয়ার্ড ভিত্তিক একাধিক গরুর ছবি, ভিডিও, দাম, ওজন, বয়স, দাঁতের সংখ্যা, কোন বাড়ি বা ফার্মে গরুটি কে পালন করেছেন সে তথ্য, স্বাস্থ্যবান কিনা সে তথ্য দেখা যাবে। এরপর পছন্দসই ৩টি গরু ঠিক করে উক্ত ৩টি গরুর মালিককে ফোন করে ওই গরুর লাইভ ভিডিও দেখে ক্রেতা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এরপর সুবিধাজনক সময়ে ওই ৩টি গরু ফার্মে বা বাড়িতে গিয়ে সরেজমিনে দেখে পছন্দের গরুটি দরদাম করে কেনার সুযোগ পাচ্ছেন ক্রেতাগণ।
যে কোনো ব্যবসায়ী নিজে বা উপজেলা প্রশাসনের প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তা বা ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তাগণের মাধ্যমে বিক্রির জন্য তার পশুর তথ্য ওয়েবসাইটে আপলোড করতে পারবেন। ক্রেতাগণ বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম, ওয়ার্ড ভিত্তিতে গরু সার্চ করে ক্রয় করতে পারবেন। ইতিমধ্যে ওয়ার্ডভিত্তিক (১৯ জুলাই রাত ৮টা পর্যন্ত) ১ হাজার ১৪৪টি গরুর বিস্তারিত তথ্য আপলোড করা হয়েছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন মার্কেটপ্লেসে www.brandszone.com.bd। এরমধ্যে সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার আপলোডকৃত গরুর সংখ্যা ৫৩৫টি ।
এবিষয়ে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এম এম মোস্তফা কামাল জানান, ভিড়ের মধ্যে হাটে গিয়ে মানুষ যে কাজটি করতো তা এখন বাসায় বসে ওয়েবসাইটেই করতে পারবেন। যেহেতু হাটে ভিড়ের মধ্যে যেতে হবে না তাই করোনা সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাবে মানুষ।
শুধু তাই না হোম ডেলিভারির জন্য অর্ডার করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ক্রেতাকে রেজিস্ট্রেশন করে ফোন নম্বর ও এনআইডি দিতে হবে। তখন পশু বিক্রেতার সাথে আলোচনা করে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করলে বিক্রেতা পশুটি ক্রেতার নিকট পৌঁছে দিলে তখন পুরো অর্থ পরিশোধ করতে হবে। অথবা ক্রেতা নিজেই গিয়ে অর্থ পরিশোধ করে পশুটি নিয়ে আসতে পারবেন। বিষয়টি ক্রেতা ও বিক্রেতার আলোচনার মাধ্যমে হবে। এখানে সারাদেশ ও বিদেশের ক্রেতাগণ গরুর অর্ডার করতে পারবেন। অনেক গরু একসঙ্গে থাকায় পশুর দাম অধিক ন্যায্য হবে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোজাম্মেল হক রাসেল বলেন, করোনা প্রতিরোধে মানুষকে ঘরে রাখতে এ উদ্যোগে খুবই ফলপ্রসূ হবে। তাই আমরা কোরবানির পশুসহ সকল ধরনের পণ্য অনলাইন মার্কেটপ্লেসে আপলোড করে মানুষকে অনলাইনে কেনাকাটা করার জন্য উৎসাহ দিচ্ছি। এতে নতুন কর্মসংস্থান হবে, অর্থনীতির চাকা সচল থাকবে সর্বোপরি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে এটি একটি যুতসই কৌশল।
www.brandszone.com.bd মার্কেটপ্লেসের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ হাসান সাজ্জাদ বলেন, মার্কেটপ্লেসটি সারা বাংলাদেশের সবার জন্য ফ্রি ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছি আমরা। আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার, দেশের এই দুঃসময়ে সম্পূর্ণ দেশপ্রেমের দৃষ্টিকোণ হতে আমরা সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের সাথে কাজ করছি। আমাদের ফেসবুক পেইজ brandszone হতে ও ওয়েবসাইটের লাইভ চ্যাট অপশন হতে আপলোড ও ক্রয় বিষয়ে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়া হয়। শহরে ই-কমার্স জনপ্রিয় হলেও গ্রামে ই-কমার্সের উদ্যোগ বিরল! ই-কমার্স উদ্যোগের ফলে গ্রামগঞ্জে গড়ে উঠছে একটি ডেলিভারি ব্যবস্থাও, যা লকডাউনে থাকা করোনা আক্রান্তদের খাদ্য সরবরাহেও ভূমিকা রাখছে।