বিমানে চাকরি দিবে বলে ৯ লাখ টাকা আত্মসাত ‘রিজেন্ট মাসুদের’

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাজীপুর | 2023-08-28 20:02:34

বিমানে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৯ লাখ টাকা আত্মসাতের আড়াই বছর পর গাজীপুরের কাপাসিয়া থানায় রিজেন্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুদ পারভেজের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ জমা পড়েছে।

সোমবার (২০ জুলাই) দুপুরে উপজেলার রাউৎকোনা গ্রামের বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ সরকার এই অভিযোগটি দায়ের করেন।

অভিযোগের তথ্য অনুযায়ী, বাদীর বড় ছেলে মো. আক্তারুজ্জামান সরকার মাস্টার্স শেষ করার পর চাকরির সন্ধান করতে থাকে। তখন কাপাসিয়ার খোদাদিয়া (কলেজ রোড) এলাকার আবু হানিফ মোড়লের ছেলে মাসুদ পারভেজ (৪০) ফোন করে বাদীর ছেলেকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেয়। মাসুদ তখন জানায় অনেককে সে সরকারি চাকরি দিয়েছে। বাদীর ছেলেকেও সে সরকারি চাকরি দিতে পারবে। পরে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ বিমানে ৩ মাসের মধ্যে নিয়োগ দিবে বলে বাদীকে প্রস্তাব দেয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রিজেন্ট গ্রুপের উত্তরা শাখায় গিয়ে তিনজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে প্রতারক মাসুদের হাতে প্রথম দফায় ৩ লাখ টাকা প্রদান করেন বাদী। টাকা পেয়ে মাসুদ জানায় বাকি ৭ লাখ টাকা প্রদানের পর বাদীর ছেলের চাকরি হবে। এরপর তিনদিন পর ৫ ফেব্রুয়ারি সাক্ষীদের উপস্থিতিতে আরও ৪ লাখ টাকা প্রদান করেন বাদী। দুই দফায় সাত লাখ টাকা নেওয়ার পর মাসুদ জানায় আরও তিন লাখ টাকা দেওয়ার পরই আক্তারুজ্জামান বাংলাদেশ বিমানে যোগদান করতে পারবে। পরে তৃতীয় দফায় ৭ ফেব্রুয়ারি আরও ২ লাখ টাকা দেওয়ার পর চাকরি প্রার্থী ছেলেকে ৮ ফেব্রুয়ারি রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা শাখায় যেতে বলেন মাসুদ। বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপের পর কাগজপত্র জমা নেওয়ার কথা থাকলেও আক্তারুজ্জামানকে নানা কর্তবার্তা বলে সেদিন ফেরত পাঠিয়ে দেয় মাসুদ। পরবর্তী সময়ে বাদী সাক্ষীদের সঙ্গে নিয়ে চাকরির বিষয়ে জানতে চাইলে টালবাহানা করে কালক্ষেপণ করতে থাকে মাসুদ। এভাবে ৩ মাস অতিবাহিতের পরও চাকরি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় মাসুদের কাছে টাকা ফেরত চায় বাদী। তখন টাকা পরিশোধের জন্য মাসুদ ১৫ দিন সময় নেয়। এ সময় অতিবাহিতের পর টাকার জন্য রিজেন্ট হাসপাতালে গেলে বাদীকে মাসুদ জানায় তার কাছে নগদ টাকা নেই। পরে বাদীকে আরেকজনের হিসেব নম্বরের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ৫ লাখ টাকার একটি ও চার লাখ টাকার একটিসহ মোট ৯ লাখ টাকার দুটি চেক প্রদান করেন মাসুদ। এরপর টাকা উত্তোলনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে গিয়ে বাদী জানতে পারেন হিসেব নম্বরে কোনও অর্থ জমা নেই। পরবর্তীতে টাকার জন্য সাক্ষীদের নিয়ে মাসুদের বাড়িতে গেলে বাদীকে হত্যা করে তার লাশ গুম করার হুমকি দেয় মাসুদ পারভেজ।

অভিযোগকারী নূর মোহাম্মদ সরকার বলেন, আমি একজন ঋণী ও গরিব মানুষ। গত আড়াই বছরেও আমার টাকা ফেরত না দিয়ে মাসুদ পারভেজ নানা হুমকি দেয়। এখন নিরুপায় হয়ে আইনের দ্বারস্থ হয়েছি। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার টাকাটা ফেরত পেতে সরকারের কাছে আবেদন জানাই।

কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, মাসুদ পারভেজের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ জমা হয়েছে, সেটির তদন্ত চলছে। বাদীর কাছে পর্যাপ্ত ডকুমেন্টস নেই। অভিযোগকারীকে অন্য একজনের চেক প্রদান করেছে মাসুদ পারভেজ। চেকের মালিকের সঙ্গে মাসুদ পারভেজের কোনও যোগসূত্র রয়েছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এটি ছাড়াও গত ১৭ জুলাই কাপাসিয়া বাজারের বর্ণালী জুয়েলারির মালিক চন্দন রক্ষিত মাসুদ পারভেজের বিরুদ্ধে বিয়ের গহনা নিয়ে ৫ লাখ ২০ হাজার ৩০০ টাকা পরিশোধ না করার অভিযোগে মামলা করেছেন।

এই দুটি অভিযোগ ছাড়াও বার্তা২৪.কমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাসুদ পারভেজের বিরুদ্ধে কাপাসিয়া থানায় আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২০০৭ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা (নম্বর-৩) হয়েছে। অন্য মামলাটি (নম্বর-৬) মারামারির অভিযোগে ২০১৫ সালের ৮ জুন কাপাসিয়া থানায় দায়ের হয়েছে। এসব ছাড়াও উত্তরা পশ্চিম থানায় ২টি প্রতারণা ও একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা রয়েছে মাসুদ পারভেজের বিরুদ্ধে।

উল্লেখ্য, রিজেন্ট হাসপাতালের অনিয়ম ও প্রতারণার ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজকে গত ১৫ জুলাই বিকেলে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সালদৈ গ্রামের এক বন্ধুর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

এ সম্পর্কিত আরও খবর