সকল ধরণের দুর্যোগ মোকাবেলা করে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এবারও করোনা মহামারির মধ্যে কৃষি উৎপাদন অব্যাহতভাবে এগিয়ে চলছে বলে জানালেন বক্তারা।
মঙ্গলবার (২১ জুলাই) রাতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ওয়েবিনার ‘বিয়ন্ড দ্যা প্যানডেমিক’ এর দ্বাদশ পর্বে উপস্থিত আলোচকরা তাদের বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নেন, কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, প্রফেসর এমিরেটাস বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সাবেক উপাচার্য ড. এম এ সাত্তার মন্ডল, বাকৃবির বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান, বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী প্রমুখ।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব, সুপার সাইক্লোন আম্পান ও সাম্প্রতিক বন্যা মোকাবিলা করেও বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পু্র্ণতা ধরে রাখতে পেরেছে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিখাতের বিশেষজ্ঞরা।
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'করোনা মহামারিতে সারাদেশের মানুষ একটা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, নানাভাবে মানুষ অর্থনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে বিপর্যস্ত। এরই মাঝে দেশে বন্যার ভয়বহতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যার ভয়বহতায় যাতে কৃষিখাত ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তই সোমবার (২০ জুলাই) আমরা বন্যাক্রান্ত প্রায় ৩৩টি জেলার কৃষি বিষয়ক কর্মকর্তা, মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সাথে আলোচনা, পর্যালোচনা করেছি, দিক নির্দেশনা দিয়েছি।
তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার সংকটে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন 'এক ইঞ্চি জমি ও খালি রাখা যাবেনা। আমরা এটা বিবেচনায় নিয়ে সর্বোচ্চভাবে চেষ্টা করেছি।
বাকৃবির সাবেক উপাচার্য ড. এম এ সাত্তার মন্ডল বলেন, 'এতোকিছুর মধ্যেও ভালো খবর হলো আমাদের কৃষিতে উৎপাদন ব্যবস্থাতে একটা লক্ষণীয় পরিবর্তন এসেছে। আর এই পরিবর্তনটা হলো ১ কোটি ৬৫ লাখ কৃষক পরিবার যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঙ্গিকে চাষাবাদ করতো সেটা এখনো আক্ষরিক অর্থে আছে। কিন্তু কার্যত একটি ঘটনা ঘটে গেছে। যে ব্যক্তি পর্যায় থেকে একটি সার্ভিস প্রোভাইডার বা মার্কেট-লেড একটি উৎপাদন ব্যবস্থা কিন্তু ধীরে ধীরে বাংলাদেশে এসেছে। যা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় এবং এটা বাণিজ্যিক কৃষির সাথে খুব সংগতিপূর্ণ।
বাকৃবির বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয় তখন কিন্তু বঙ্গবন্ধু কিন্তু কৃষির ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। কৃষিকে আরো উন্নত করার জন্য এবং কৃষি শিক্ষা ও গবেষণা আরো এগিয়ে নেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষি গ্যাজুয়েটদের প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা প্রদান করেন। সেই থেকে কৃষি গতি পেয়েছে এবং দূর্বার গতিতে এগিয়ে গিয়েছে।'
বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান বলেন, 'মৎস্যের ব্যাপারে প্রথম দেখি এই যে কোভিড-১৯ সারাবিশ্বকে যেটাকে আক্রান্ত করেছে বাংলাদেশও সেটি থেকে বাদ পড়েনি। মৎস্য যে সমস্ত জায়গায় বিচরণ করে অর্থাৎ প্রজনন কেন্দ্রগুলো থেকে হ্যাচারির মালিকরা মাছ তুলে আনতে পারেন নাই। যেহেতু সাপ্লাই চেইনটা ভালো ছিলো না, সেখানে মৎস্য প্রজনন টা বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে যদি উন্মুক্ত জলাশয়ের কথা বলি, সেখানে কিন্তু শিল্পকারখানা বন্ধ থাকা বা বেপরোয়াভাবে যে মাছ ধরে ফেলা বা পোনা মাছ ধরে ফেলা এগুলো এবার হয় নাই।'
ফরিদুন্নাহার লাইলী বলেন, 'কৃষি উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনায় এসেছে এক ব্যাপক পরিবর্তন। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর জনসংখ্যা দ্বিগুণ পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে প্রায় চারগুণ। এখন আমরা খাদ্য উৎপাদনে সয়ংসম্পূর্ণ শুধু তাই নই বাংলাদেশে ধান উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়। এখন আমরা খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ।
ওয়েবিনারটি আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি প্রচারিত হয়। এছাড়াও বিজয় টিভির পর্দায় ও ফেসবুক পেইজ, বিডিনিউজ২৪, সমকাল, ইত্তেফাক, ভোরের কাগজ, যুগান্তর, বাংলানিউজ২৪, জাগোনিউজ২৪, বার্তা২৪, সারা বাংলা, বাংলাদেশ জার্নাল এবং চ্যানেল আই'র ফেসবুক পেজে প্রচারিত হয়।