নদীতে আবারও চামড়া ফেলতে চান না ব্যবসায়ীরা

, জাতীয়

আবদুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,কুমিল্লা | 2023-08-28 22:54:07

গত বছর কোরবানির ঈদে সারাদেশের মতো কুমিল্লাতেও সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে অনেক চামড়া ব্যবসায়ী সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন। বঞ্চিত হয়েছিল মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এতিম শিক্ষার্থীরা। বছরজুড়ে লোকসানের সেই ক্ষত চিহ্ন বয়ে বেড়িয়েছেন কুমিল্লার অনেক চামড়া ব্যবসায়ী। তাই এ বছরও উদ্বিগ্ন কুমিল্লার চামড়া ব্যবসায়ীরা। তারা গতবারের মতো এবারও আর চামড়া নদীতে ফেলতে চান না। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

জানা গেছে, গত বছর সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে দাম না পেয়ে অনেকেই পশুর চামড়া মাটি চাপা দিয়েছিলেন। আবার অনেকেই ফেলে দিয়েছিলেন নদীতে। আবার রাস্তার পাশেও চামড়া ফেলে রাখা হয় দীর্ঘদিন। পরে এসব চামড়ার পঁচা গন্ধে হাটাচলা করা দায় ছিলো। গত বছর কোরবানির ঈদে পশুর চামড়া বিক্রি না করতে পারার এমন অনেক দৃশ্য ভাইরাল হয়েছিলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।

জেলার বেশ কয়েকজন মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী বলেন, গত বছর সিন্ডিকেটের কারণে দেড়-দুই লাখ টাকা মূল্যের গরুর চামড়াও ১০০ থেকে ২০০ বিক্রি হয়েছিল। এরপরও মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছিল। ওই বছর অনেক মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী পথে বসেছিল। যার কারণে এ বছর এই মৌসুমী ব্যবসায় আগ্রহ নেই অনেকের।

জেলার বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা-এতিমখানার শিক্ষকরা জানান, কুমিল্লায় দুই লাখেরও বেশি পশু কোরবানি হয়ে থাকে প্রতি বছর ঈদুল আজহায়। আর এসব পশুর চামড়ার বড় একটি অংশ মানুষ দান করেন বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানায়। তবে গত বছর অনেক মাদ্রাসা ও এতিমখানা চামড়া সংগ্রহ করে উল্টো বিপদে পরেছিল। চামড়া সিন্ডিকেটের কারনে ন্যূনতম মূল্য না পেয়ে অনেক মাদ্রাসা ও এতিমখানা তাদের সংগ্রহ করা চামড়া মাটি চাপা দিয়েছিল। এসব কারণে অনেক মাদ্রাসা ও এতিমখানার লেবার খরচও উঠেনি। যার কারণে এ বছরও চামড়া সংগ্রহ করা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রযেছে মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলো। এজন্য সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

এদিকে, জেলার বেশিরভাগ মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহের পর বিক্রি করে থাকেন জেলার সবচেয়ে বড় চামড়ার বাজার কুমিল্লা নগরীর ঋষিপট্টিতে। ঋষিপট্টির ব্যবসায়ীরাও তাদের লোকজন দিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া ক্রয় করে থাকেন। তবে গত বছরের ঘটনায় এ বছরও ঋষিপট্টির চামড়া ব্যবসায়ীদের মাঝেও হতাশা বিরাজ করছে।

কুমিল্লা ঋষিপট্টির ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রতন ঋষি জানান, গত বছর ঢাকা ও স্থানীয় সিন্ডিকেটের কারনে আমাদের অনেক লোকসান গুণতে হয়েছে। আমরা স্থানীয়ভাবে অনেক চামড়া ক্রয় করেছি। পরে এসব চামড়া বিক্রি করতে পারিনি।

ঋষিপট্টির চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হরি ঋষি জানান, গত বছরের ঘটনায় চামড়া ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। এ বছর এমন ঘটনার পুনারাবৃত্তি চাই না। এজন্য তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এদিকে, সাজু মিয়া নামে কুমিল্লা নগরীর একজন চামড়া ব্যবসায়ী জানান, প্রতি বছর কোরবানির সময় মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের আবির্ভাব হয়। তাদের অনেকেই সরকারি নিয়মনীতি জানেন না এবং মানে না। তখন তাদেরকে দিয়ে অনেকে সিন্ডিকেট সৃষ্টির মাধ্যমে কোরবানির পশুর চামড়া ক্রয় করেন। যারা কারনে প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হন।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, এ বছর এসব বিষয়ে প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। এবার যারা চামড়া বিক্রি করতে পারবেন না, তাদের জন্য স্থানীয় এতিমখানা কিংবা মাদ্রাসায় চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। আর এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এরপর দুই মাস পর সংরক্ষণ করা চামড়া বিক্রি করে এর একটি অংশ মাদ্রাসায় দান করা হবে। আর বাকি অংশ চামড়ার মালিককে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর