কুষ্টিয়া: অনবরত কেঁদে চলেছেন শিশু আকিফা খাতুনের বাবা হারুন উর রশিদ। কখনো উচ্চ স্বরে, কখনো বা নীরবে। সঙ্গে আকুলি বিকুলি বিলাপ-‘আমারে ছাইড়া কোথায় গেলিরে মা। আমি কী নিয়ে বাঁচব। কাকে কোলের মধ্যে নিয়ে ঘুমাব? মাঝ রাতে ঘুম ভাঙলে কাকে কোলে নিয়ে বসে থাকব?’
গত মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস এলাকায় পথচারী মা-মেয়েকে ধাক্কা দেয় যাত্রীবাহী একটি বাস। এতে মা রিনা বেগম ও শিশু আকিফা খাতুন গুরুতর আহত হয়। ঘটনাটি পাশের একটি জুয়েলারির দোকানের সিসি টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
ভিডিওতে দেখা যায়, কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস এলাকায় আকিফাকে কোলে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন মা রিনা খাতুন। থেমে থাকা একটি বাসের সামনে দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় বাসটি কোনো ধরনের হর্ন না দিয়েই আচমকা মা-সন্তানকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। এতে মায়ের কোল থেকে ছিটকে রাস্তায় গিয়ে পড়ে আকিফা।
কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস মোড়ে এ দুর্ঘটনার ভিডিও চিত্র ফেসবুকে ভাইরাল হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যায় রাজশাহী ছেড়ে আসা গঞ্জেরাজ (ঢাকা মেট্টো-গ-১৪-০১৭৭) নামের বাসের চালক রিনা বেগমকে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) ভোর ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আকিফার মৃত্যু হয়।
নিহত আকিফার ভাই রোহান বলেন,‘মঙ্গলবার দুপুরে আমার মা এবং ছোট বোন পোড়াদহে নানাবাড়ি বেড়াতে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ওই ঘটনা ঘটে। আমাদের তিন ভাই-বোনের মধ্যে আকিফা সবার ছোট। আমাদের আদরের বোনটাকে এভাবে হারাতে হবে তা কখনো ভাবিনি।’
এদিকে এ ঘটনায় তিনজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি করেন আকিফার বাবা হারুন উর রশিদ।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন জানান, সড়ক দুর্ঘটনা আইনে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে। মামলায় গাড়ির চালক এবং দুই সহযোগীকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শিগগিরই আসামিদের ধরা সম্ভব হবে।