লক্ষ্মীপুর: ভরা মৌসুমেও লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ছে না। অলস সময় কাটাতে হয় জেলেদের। নৌকা নিয়ে নদীতে গেলে লোকসান গুনতে হয়। এরমধ্যে সদরের মেঘনা নদীর তিনটি স্থানে খুঁটি স্থাপন করে মাছ শিকার করছে একটি চক্র। মৎস্য আইনে থাকা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পাঁচ বছর ধরে নদী দখল করে রেখেছে তারা। এ চক্রটি প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
একদিকে পেশাদার জেলেরা নদীতে মাছ না পেয়ে খালি হাতে ফিরছে। অন্যদিকে নদীতে খুঁটি স্থাপনে পানি ও মাছের স্বাভাবিক গতি প্রবাহে বিঘ্ন ঘটছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের চর মেঘা এলাকায় নদীর তিনটি স্থানে বড় গাছের খুঁটি স্থাপন করে রাখা হয়েছে। এসব খুঁটিতে নিষিদ্ধ জাল বেঁধে জোয়ার-ভাটার মাঝামাঝি সময়ে মাছ শিকার করে আসছে ভোলার একটি প্রভাবশালী চক্র। মাছ ধরার পর তা সংরক্ষণের জন্য নদীর তীরে সরকারি খাস জমিতে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী ঘরও নির্মাণ করা হয়। ওই ঘরকে আড়ত হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পাঁচ বছর ধরে এ বাণিজ্য চলছে। শতাধিক জেলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও মাছ বিক্রি করে প্রতিবছর চক্রটি ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা আয় করে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, গত ৬ আগস্ট জেলা মৎস্য বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় অস্থায়ী ঘর থেকে ৩০ কেজি ইলিশসহ তিনজনকে আটক করা হয়। দ্রুত নদী থেকে খুঁটি ও নদীর তীরে নির্মিত অস্থায়ী ঘর সরানোর নির্দেশ দেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। কিন্তু দখলদাররা তা কর্ণপাত করেনি।
মাছ শিকারে তদারকির দায়িত্বে থাকা ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমাকে মাসিক বেতন দেওয়া হচ্ছে। ভোলার এক মহাজন আমাকে এ কাজে নিয়োজিত করেছেন। তারা মাঝে মধ্যে আসেন। তবে এটি যে অবৈধ কাজ তা আমি জানি না।’
চর রমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু ইউছুফ ছৈয়াল জানান, দীর্ঘদিন থেকে একটি প্রভাবশালী চক্র নদীতে অবৈধভাবে মাছ শিকার করছে। তাদেরকে নিষেধ করলেও শুনছে না। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ শাজাহান আলী জানান, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রমাণ মিলেছে। সংশ্লিষ্টদেরকে দ্রুত খুঁটিসহ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর তা না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম মহিব উল্যাহ জানান, নদীতে খুঁটির সঙ্গে জাল বেঁধে মাছ শিকার অবৈধ। খুঁটি-জাল মাছের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এতে ছোট-বড় সব প্রজাতির মাছ আটকা পড়ে। এভাবে অনেক মাছের ভ্রুণ নষ্ট ও পোনা মরে যায়। খুঁটিগুলো অপসারণ করা হলে মাছ অবাধে বিচরণ করতে পারবে। এতে ইলিশ উৎপাদনও বাড়বে। অবৈধ এসব স্থাপনা অপসারণে নিজেদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে।