গাইবান্ধায় ৮৮ সালের বন্যার রেকর্ড ছাড়াল

, জাতীয়

তোফায়েল হোসেন জাকির, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাইবান্ধা | 2023-08-27 11:50:14

গাইবান্ধার উত্তর জনপদের নদীবেষ্টিত জেলা গাইবান্ধা। জেলার বুক চিরে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, করতোয়া, তিস্তা ও বাঙ্গালীসহ বিভিন্ন নদ-নদী। ফলে প্রতিবছরই বন্যা আঘাত আনে এই জেলায়। তবে এ বছরের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। যা ১৯৮৮ সালের প্রলয়ঙ্করী বন্যার রেকর্ড ভেঙেছে।

নদী বিশ্লেষক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে গাইবান্ধায় বয়ে যাওয়া বন্যার স্থায়িত্ব ছিল ২৫ দিন। এর পর থেকে প্রতি বছরের জুন-জুলাই মাসে বন্যা দেখা দিলেও, সেটি স্থায়িত্ব ছিল ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত। কিন্তু এ বছরের জুনের ২৫ তারিখে বন্যা শুরু হলেও, এখনো নামেনি বন্যার পানি। একমাস অতিবাহিত হওয়ার পর কয়েক দিন আগে নদ-নদীর পানি কিছুটা কমতে থাকলেও সেটি আবার শনিবার দুপুর থেকে বাড়ছে। যার কারণে পানির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে নিম্ন ও চরাঞ্চলের প্রায় দুই লাখ মানুষের।

রোববার (২ আগস্ট) দুপুরে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহরতলী পয়েন্টে ২৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

যা শনিবার দুপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে করতোয়া নদীর পানি ৩১ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি ২৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জানা গেছে, গাইবান্ধা জেলার দীর্ঘ স্থায়ী বন্যার কারণে পানির নিচে তলিয়ে গেছে জেলার ৭টি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট ও ফসলি জমি। একই সঙ্গে ভেসে গেছে গবাদি পশুপাখি ও পুকুরের মাছ। এছাড়ার বন্যার পানিতে এবং সাপের কামড়ে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে।

এদিকে, বন্যায় সবকিছু হারিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষ। খাবার, বিশুদ্ধ পানি, টয়লেট ও আবাসন সংকটে ভুগতে হচ্ছে তাদের। সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হলেও, তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

দীর্ঘস্থায়ী পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। হুমকির মুখে পড়েছে বাঁধগুলো। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলোর যেন দুর্ভোগের অন্ত নেই। বিশেষ করে বেকায়দা পড়েছে ১৬৫টি চরের বসবাসরত পরিবারগুলো। তারা নৌ-ডাকাতের আতঙ্কে গরু-ছাগলগুলো রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন।

ঈদের দিনে বন্যা কবলিত দরিদ্র মানুষদের কপালে জোটেনি কোরবানির গোশত কিংবা নতুন জামা-কাপড়। নিরানন্দে দিন কাটছে তাদের। সব মিলিয়ে গাইবান্ধার জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকেই রয়েছে।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, বন্যার্ত মানুষদের দুর্ভোগ মোকাবিলায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করাসহ নানাভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যসেবায় মেডিকেল টিম বসানো হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর