অনিয়মিত শ্রমিকদের জন্য বন্যা বীমা

, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-28 11:12:29

এ বছরের বর্ষা মৌসুমে বন্যায় কবলিত বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষি শ্রমিকদের রক্ষার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি), অক্সফাম বাংলাদেশ এবং গ্রীন ডেল্টা ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে একটি নতুন বীমা স্কিম চালু করেছে।

সোমবার (৩ আগস্ট) ডব্লিউএফপি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানিয়েছে।

এতে বাংলাদেশে ডব্লিউএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর রিচার্ড রেগান বলেন, 'বার্ষিক বন্যায় যেসব ক্ষয়ক্ষতি হয় তার বিপরীতে বাংলাদেশের মানুষের কোনো সুরক্ষা নেই। তাই ডব্লিউএফপি একটি বন্যা বীমা স্কিম চালু করছে যা এ ধরনের প্রথম উদ্যোগ'।

পূর্বের তুলনায় অধিক বৃষ্টিপাত ও পরিবর্তিত জলবায়ু বাংলাদেশে বন্যার তীব্রতাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। যেহেতু জুলাইয়ের শুরু থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত বিদ্যমান বর্ষা মৌসুমে বন্যায় সৃষ্ট দুর্যোগে শ্রমিকরা মজুরি হারায়। তাই এই স্কিমের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন ও চিলমারী উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নে কৃষিকাজের সাথে জড়িত ২ হাজার অনিয়মিত শ্রমিককে এ বছর আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করবে। প্রবল বন্যায় মজুরি হারানোর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রত্যেক শ্রমিক পরিবার ২ হাজার ৭০০ থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহযোগিতা পাবে।

রিচার্ড রেগান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ একটি বিধ্বংসী বন্যার মোকাবিলা করছে যা বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত করে বসতবাড়ি ও ফসল ধ্বংস করেছে। এর ফলে কোভিড-১৯ মহামারী দ্বারা সৃষ্ট মানুষের ভোগান্তির তীব্রতা অনেক বেড়ে গিয়েছে।

কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সির (কোইকা) অর্থায়নে পরিচালিত এই ঝুঁকি স্থানান্তর সমাধানমূলক প্রকল্পের সার্বিক লক্ষ্য হল পরিবার ও কমিউনিটির সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। যাতে তারা জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলা করতে পারে এবং দুর্যোগকালীন সময়ে ঝুঁকি কমিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখতে পারে।

কোইকা বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইয়ং-আ দোহ বলেন, 'উঁচু এলাকা থেকে অতিমাত্রায় পানির প্রবাহ ইতিমধ্যে শুধুমাত্র প্রকল্প এলাকাগুলোকেই নয় বরং দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোকে প্লাবিত করেছে। অরক্ষিত জনগণ, বিশেষ করে অনিয়মিত ও বর্গাদার চাষিরা মজুরি ও কৃষিজাত ফসল হারিয়ে সবথেকে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। কোইকা বিশ্বাস করে যে এই নব্য প্রবর্তিত পদ্ধতিসমূহ—যেমন সূচকভিত্তিক বন্যা বীমা, পূর্বাভাস ভিত্তিক অর্থায়ন এবং মৌসুমি জীবিকা নির্বাহ ইত্যাদি পদ্ধতি যা এই প্রকল্পে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হবে। মানুষের ভোগান্তি কমাতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কাউকে বাদ না দিয়ে মানুষ কেন্দ্রিক শান্তি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে কোইকা বাংলাদেশের মানুষের পাশে আছে'।

অক্সফাম বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর দীপঙ্কর দত্ত বলেন, 'যদিও জলবায়ুর পরিবর্তন আমাদের সবাইকে প্রভাবিত করে, কৃষিখাতের অনিয়মিত শ্রমিকদের মত স্বল্প আয়ের মানুষেরা এই প্রভাবজনিত কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে। যা কিনা সামাজিক বৈষম্য আরো প্রকট করে তুলছে। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের পিছনে এদের ভূমিকা সব থেকে নগণ্য। আমরা আশা রাখি যে আমাদের এই সদ্য চালু করা সূচকভিত্তিক বন্যা বিমা পণ্যের আদলে সরকার একই ধরনের প্রকল্প আরো বিস্তৃত পরিসরে পরিচালনা করবে যাতে দেশের কৃষিখাতে জড়িত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রকট সংকটের ঝুঁকি ও বৈষম্য কমিয়ে আনা সম্ভব হয়'।

এই পণ্যটির উন্নয়নে ১৯ বছরের স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য কাজে লাগানো হয়েছে। একে আরও বৈধতা দিয়েছে পানির উচ্চতা ও বৃষ্টিসংক্রান্ত তথ্য। পূর্বনির্ধারিত বন্যা সূচকের ভিত্তিতে এই আর্থিক অনুদান প্রদান করা হবে, অর্থাৎ মোট ভৌগলিক এলাকার কত শতাংশ প্লাবিত হয়েছে এবং কতদিন ধরে সেখানে বন্যা চলছে। গ্রীন ডেল্টা ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড বীমাকারক হিসেবে সমস্ত ঝুঁকি বহন করবে।

গ্রীন ডেল্টা ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ফারজানা চৌধুরী বলেন, 'ডব্লিউএফপি ও অক্সফাম বাংলাদেশের সাথে অংশীদারিত্বে আমি উচ্ছ্বসিত কেননা এই পণ্যটি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষি শ্রমিকরা যেসব সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে সেগুলোর সমাধানে কাজ করবে। এছাড়াও, বিধ্বংসী বন্যার সময়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আর্থিক নিরাপত্তা প্রদানে সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের এসডিজি লক্ষ্য অর্জনকে আরো শক্তিশালী করা হবে'।

এ সম্পর্কিত আরও খবর