লক্ষ্মীপুর: মেঘনা নদী। যার রয়েছে বিস্তীর্ণ জলরাশি। আর এই জলরাশির ওপর পড়া সূর্যের আলো এর সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। সকাল-দুপুর-বিকেলের ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্যে এটি বিভিন্নভাবে রূপায়িত হয়। গোধূলি সন্ধ্যায় এর রূপ আরও বেড়ে যায়। এ নদীতে অবিরামহীন চলে জোয়ার-ভাটার খেলা। প্রতি মুহূর্তেই নদী থেকে ভেসে আসে বিশুদ্ধ বাতাস। যা কর্মক্ষম মানুষের সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে পারে।
হয়তো এটি কক্সবাজারের মতো না। নেই দীর্ঘ বালির বিচ। তবে আছে নদীর দীর্ঘ তীর রক্ষা বাঁধ। যেখানে বসেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটিয়ে দেয় দর্শনার্থীরা। বাঁধের নিচে এলোমেলো ব্লকগুলোতে এসে ধাক্কা খাওয়া ঢেউয়ে থাকে দর্শনার্থীদের চোখের অপলক দৃষ্টির ছোঁয়া। ছুটির দিন কিংবা যেকোনো উৎসবের সময় এই বাঁধ এলাকা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। প্রতিনিয়ত নদীর জোয়ার-ভাটার খেলা মানুষের মনকে নাড়া দেয়।
যদিও মেঘনার অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে লক্ষ্মীপুরের বিস্তীর্ণ জনপদ। আবার এই নদীতেই জেলার প্রায় ৬০ হাজার জেলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। এর মাঝেও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মেঘনা তীরের সৌন্দর্য মানুষের মন কেড়ে নিয়েছে। তেমনি একটি হচ্ছে জেলার রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার মেঘনার তীর। যেখানে দীর্ঘ নদী রক্ষা বাঁধে প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের দেখা যায়।
মেঘনা নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে জাতীয় মাছ ইলিশ। যার স্বাদ অন্য মাছ থেকে আলাদা। এ মাছ ধরার দৃশ্য অনেকেই খুব কাছ থেকে দেখতে চান। যা মেঘনার তীরে এলে উপভোগ করা সম্ভব।
তবে মেঘনা তীরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দর্শনার্থীদের আরও আকৃষ্ট করা সম্ভব। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সজাগ দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। যদিও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে এলাকাটি। তবু পর্যটন এলাকা হিসেবে এখনো স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। তাই একে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার জন্য দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।
রামগতি উপজেলা পরিষদের কাছেই মেঘনার তীর। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঠিক সামনে রয়েছে দীর্ঘ নদী রক্ষা বাঁধ। যাতায়াতে রয়েছে সু-ব্যবস্থা। জেলা শহরের ঝুমুর সিনেমা হল ও দক্ষিণ স্টেশন থেকে বাস, সিএনজি ও লেগুনা রয়েছে। বাস রামগতি পৌরসভা এলাকায় টার্মিনালে গিয়ে থামে। সেখান থেকে রিকশা, অটোরিকশাযোগে মেঘনা তীরে যাওয়া যায়। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী জেলা থেকে সরাসরি সিএনজিযোগে অল্প সময়ে আসা যায়।
স্থানীয়রা জানায়, এখানকার মেঘনার দৃশ্যটা খুবই সুন্দর। তবে দরকার পরিচর্যার। বাঁধের উপর এবং আশপাশে বসার জন্য ব্যবস্থা করা দরকার। এছাড়াও উপজেলা পরিষদের সামনে দিয়ে মেঘনার তীরে যাওয়ার সড়কটির নাজুক অবস্থা। কাদামাটি ভর্তি থাকায় সড়কটি চলাচলের অনুপোযোগী। দ্রুত এ ১০০ গজ সড়ক সংস্কার করা প্রয়োজন।
ঘুরতে আসা লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র রবিউল ইসলাম ও আরমান হোসেন বলেন,‘আমাদের বাড়ি সদর উপজেলার হামছাদী ইউনিয়নে। এ নদীর তীরে আসলে খুব ভালো লাগে। তাই মাঝে মধ্যে এখানে আসা হয়। তবে ঈদের সময় আসতে কখনো ভুল হয় না।’