মেহেরপুর: আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে ৪৬ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দিতে গোপন টেন্ডার দিয়েছে মেহেরপুর সিভিল সার্জন অফিস ও মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল। এর মধ্য দিয়ে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে বিভিন্ন মহলে শুরু হয়েছে ব্যাপক তোলপাড়। পুনরায় টেন্ডার দিতে মন্ত্রণালয়ে ডিও দিয়েছেন স্থানীয় এমপি।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের জন্য ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল সরবরাহের লক্ষ্যে দুটি পত্রিকায় গত ৬ জুন পৃথক দুটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সিভিল সার্জন অফিস ও মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল।
সিভিল সার্জন অফিসের অধীনে ২০ জন ও ওই হাসপাতালের অধীনে ২৬ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের জন্য জনবল সরবরাহকারী কোম্পানি/প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২৪ জুন দরপত্র দাখিলের শেষ দিন পেরিয়ে গেলে বিষয়টি অনেকের নজরে আসে। গোপনে টেন্ডার আহ্বানের মধ্য দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে রাজনৈতিক মহলে জোর প্রতিবাদ শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে টেন্ডার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে গড়িমসি শুরু করেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাগজপত্র চাইলে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমান বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ফরহাদ হোসেন দোদুল বলেন, ‘তারা গোপনে টেন্ডার করেছে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে। যে দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে সেগুলোর নাম মেহেরপুরের কেউ কখনো শুনেছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়া বাংলা পত্রিকার নাম দৈনিক সন্ধানী বার্তা। এই নাম ইন্টারনেটেও খুঁজে পেলাম না। আর ইংরেজী পত্রিকার নাম হচ্ছে দি ডেইলি আর্থ।’
পছন্দের ঠিকাদারের মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্যের উদ্দেশে তারা গোপনে টেন্ডার করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সিভিল সার্জন ডা. জি.কে.এম শামসুজ্জামান ও তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমান ব্যাচমেট ছিলেন। তারা ইচ্ছে মতো নিয়োগ বাণিজ্য করতে চাইছে। আমি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও আমাকে কিছুই জানানো হয়নি।’
গোপনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ঠিক করে নিয়োগ বাণিজ্য করতে অফিস সহকারী খলিলুর ও হাবিব কাজ করেছেন বলেও অভিযোগ করেন ফরহাদ হোসেন দোদুল। তিনি বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুনঃদরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর কাছে ডিও দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের সাথে কথা বলেছি।’
হাসপাতালের একটি সূত্রে জানা গেছে, গোপন টেন্ডারের মাধ্যমে কুষ্টিয়ার জনৈক এক ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী জনবল সরবরাহ করবে। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য ওই ঠিকাদারের মাধ্যমে কাকে কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে তারও একটি খসড়া করা হয়েছে। মোটা অংকের অর্থের মধ্য দিয়েই তাদের নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। তবে এমপির বাধার কারণে পুনরায় টেন্ডারের প্রক্রিয়া চলছে বলেও একটি সূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও পছন্দের লোকদের নিয়োগ দিতে সিভিল সার্জন ও তত্ত্বাবধায়কের উপর রাজনৈতিক নেতাদের চাপ বাড়ছে। এক্ষেত্রে বিপাকে পড়েছেন সিভিল সার্জন ও তত্ত্বাবধায়ক।
এদিকে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন সিভিল সার্জন ডা. জি.কে.এম শামসুজ্জামান ও তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমান।
সিভিল সার্জন শামসুজ্জামান জানান, বহুল প্রচারিত পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে এমন কোনো শর্ত নেই। টেন্ডারের নিয়মানুযায়ী যাচাই-বাছাই হচ্ছে। বাধাও আছে। বিষয়টি নিয়ে কী করা যায় তা পরে জানানো হবে।