ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও নদী ভাঙন এলাকার মানুষের আশ্রয়নের কথা চিন্তা করে সরকার সারাদেশে ৫৫০টি মুজিব কিল্লা নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। সেই লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা ধরে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদও দুই বছর অতিবাহিত হয়েছে। তবে এখনো এর দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। এমনকি এখনো প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ জটিলতাই কাটাতে পারেনি।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে রয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। তিন বছরের প্রকল্পে দুই বছরেও অগ্রগতি না থাকায় সংসদীয় কমিটিতে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। প্রকল্প গ্রহের পরেও কাজ না হওয়ার কারণ জানতে চেয়েছে কমিটি। প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি দেখতে মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন জুয়েল আরেং ও মুজিবুর রহমান চৌধুরী। এছাড়াও প্রতিটি প্রকল্পের সময়সীমা, অগ্রগতি ও প্রকল্প বিষয়ক যাবতীয় তথ্যাবলী পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।
বৈঠকে মুজিব কিল্লা নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে কমিটির সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, বন্যায় অনেক এলাকাই ক্ষতিগ্রস্ত এই সময়ে মুজিব কিল্লা নির্মাণ হলে কিছুটা উপকৃত হত মানুষ। একটা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে অথচ তার প্রকল্প পরিচালকই এখনো ঠিকমত নিয়োগ হয়নি। এটা কেনো?
বুধবার (১২ আগস্ট) বিকেলে সংসদ ভবনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, মো. আফতাব উদ্দিন সরকার, মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, জুয়েল আরেং, মজিবুর রহমান চৌধুরী, মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও কাজী কানিজ সুলতানা অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়া বৈঠকে বন্যা কবলিত এলাকায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে যে বরাদ্দ দেয়া হয়, তার অনুলিপি অত্র এলাকার জনপ্রতিনিধিদের দেয়ার সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে সভা আয়োজন করতে কমিটি সুপারিশ করে।
কমিটি পূর্ববর্তী বৈঠকে গ্রামীণ অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য চল্লিশ দিনের কর্মসূচী প্রকল্পে একজন শ্রমিকের দৈনিক মজুরি দুইশত টাকা হতে ন্যূনতম পাঁচশত টাকায় নির্ধারণ করার যে সুপারিশ করা হয়েছিল তা পুনরায় অর্থ বিভাগকে বিবেচনা করার জন্য সুপারিশ করে।
মুজিব কিল্লা নির্মাণ প্রকল্প:
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যাপ্রবণ এলাকার মানুষের নিরাপত্তার জন্য মুজিব কিল্লা নির্মাণ করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সেগুলো পরিত্যক্ত হয়ে যায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরিত্যক্ত এসব মুজিব কিল্লা সংস্কারের পাশাপাশি নতুন করে আরো কিল্লা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।
দেশের ঘূর্ণিঝড়প্রবণ ১৬টি জেলার ৬৪টি উপজেলায় এবং বন্যাপ্রবণ ও নদী ভাঙন এলাকার ২২টি জেলার ৮৪টি উপজেলায় বিদ্যমান ১৭২টি মুজিব কিল্লা সংস্কার ও উন্নয়ন এবং নতুন মুজিব কিল্লা নির্মাণ করা হবে। মোট ৫৫০টি মুজিব কিল্লা নির্মাণ করা হবে।
এ লক্ষ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১৮ সালের ১ জুলাই হতে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালে এই মুজিব কিল্লা নির্মাণ করার কথা। প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ৯৫৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। পুরো টাকাই জিওবি ফাণ্ড থেকে খরচ করা হবে।
বৈঠকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রণালয় এর সচিব ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাবৃন্দ এবং জাতীয় সংসদের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থতি ছিলেন।