বঙ্গবন্ধুর হত্যা নিছক কোনো ব্যক্তির হত্যা ছিল না। স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অর্থাৎ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যারা বিশ্বাস করে নাই সেই অপশক্তি, তাদের মদদদাতা প্রত্যক্ষভাবে বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার হয়েছে। কিন্তু ‘বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত খুনিদের আবার বের করতে হবে। তাদের মুখোশ পৃথিবীর সামনে উন্মোচন করতে ট্রুথ কমিশন করতে সংসদ নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর ওপর আনিত প্রস্তাব সাধারণের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে স্বাধীন বাংলাদেশ পেতাম না। বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ এক এবং অভিন্ন। আমাদের এই পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত, আমাদের এই ভূখণ্ড, আমাদের মানচিত্র যতদিন থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধু তার সমহিমায় বাস করতে থাকবেন।
তিনি বলেন, খুনিরা যথার্থই বুঝতে পেরেছিল শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেই তাদের উদ্দেশে সফল হবে না, তাদের মূল উদ্দেশে ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করা। বাংলাদেশকে হত্যা করা। তাই কেবল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হোন নাই। তার (বঙ্গবন্ধুর) মাসুম বাচ্চা ১০ বছরের শিশু রাসেলকেও ক্ষমা করে নাই। বঙ্গমাতাসহ পরিবারের কাউকেই রেহাই দেয়নি। তারা বুঝেছিল বঙ্গবন্ধুর রক্তের ছিটে ফোটাও যদি থাকে তাকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতি আবার জেগে উঠবে, ঘুরে দাঁড়াবে।
বঙ্গবন্ধু যেদিন ফিরে এসেছিল সেদিন পত্রপত্রিকায় লেখা হয়েছিল ৫০ লাখ লোক না খেয়ে মারা যাবে। কোটি কোটি বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। যদি বঙ্গবন্ধু ফিরে না আসতেন তাহলে কি মিত্র বাহিনী বাংলাদেশ থেকে যেত?
তিনি আরো বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য বঙ্গবন্ধু ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল করেছিলেন। সেই বিচারের প্রায় ৪ হাজার অভিযুক্ত ব্যক্তি গ্রেফতার হয়েছিল। তাদের বিচার কাজ চলছিল, প্রায় ৭০০-৮০০ যুদ্ধাপরাধী সেদিন দণ্ডিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল এরপর পেছনের কারণটা বোঝা যাবে; বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে খুনি মোস্তাক-জিয়া চক্র ক্ষমতায় আসলো। তারা এসে কি করেছে? ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। ২৪ বছর লড়াই সংগ্রাম করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়েছিলাম। তারা সেই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে বিসর্জন দিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চালু করে।
তিনি বলেন, আজকে একটা চোরকেও যদি হত্যা করা হয়, তার তার বিচার হয়। আর জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল সেই হত্যার বিচার বন্ধ করতে ইনডেমনিটি দিয়ে জিয়া-মোস্তাক চক্র খুনিদের শুধু রক্ষাই করে নাই তাদের বিদেশে বড় বড় চাকরি দিয়ে তাদের পদায়ন করে।
তিনি আরো বলেন, এখানে সংসদ নেতা আছেন, তাই একটা দাবি রাখছি বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত খুনিদের আবার বের করতে হবে। পৃথিবীর সামনে তাদের মুখোশ চিহ্নিত করতে ট্রুথ কমিশন করতে হবে। জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময়ও বলেছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে সরকার ছিল সেই সরকারকে অস্বীকার করে ওয়ার কাউন্সিল করে সে যুদ্ধ করতে চেয়েছিল। এই ষড়যন্ত্র কেবল ১৯৭৫ সালে হয় নাই যুদ্ধের সময় হয়েছে এর আগেও হয়েছে।