শাজাহান খানের চ্যালেঞ্জ: সড়ক দুর্ঘটনায় শুধু চালক দায়ী নয়

, সংসদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা ২৪.কম | 2023-08-30 09:43:07

সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানকে প্রধান করে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর কমিটি গঠন করায় সংসদে সমালোচনা হয়। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন শাজাহান খান।

সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তরকালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম।

তিনি বলেন, ‘বদিকে দিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ, শাজাহান খান-কে দিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা। গতবার শাজাহান খানের এক হাসি নিয়ে কতকিছু ঘটলো। সেই শাজাহান খানকে প্রধান করে গঠিত কমিটি সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কতটা সক্ষম হবে।’

পরে তার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে শাজাহান খান কার্যপ্রণালী বিধির ২৭৪ বিধিতে ব্যক্তিগত কৈফিয়ত দেন তিনি। এসময় তিনি ফখরুল ইমাদের বক্তব্যকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত উল্লেখ করে বলেন, ‘তিনি (ফখরুল ইমাম) মাদক ব্যবসা আর সড়ক দুর্ঘটনাকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে আমার সম্পর্কে একটি মন্তব্য করেছেন যা অত্যন্ত দু:খজনক এবং নিন্দনীয়। তার এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। পাশাপাশি স্পিকারকে ওই বক্তব্য এক্সপান্স অথবা ফখরুল ইমামকে প্রত্যাহারের দাবি জানান’।

ব্যক্তিগত কৈফিয়ত দিতে যেয়ে শাজাহান খান বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে চাই দুর্ঘটনার জন্য শুধু চালক দায়ী, এটা ঠিক না। তারপরেও আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আমরা কিছু কার্যকর ব্যবস্থা নেব, আমি আশা করি দুর্ঘটনার হার আরও কমবে। দায়-দায়িত্ব নিয়েই কথা বলছি।’

শাজাহান খান বলেন, ‘২০০৯ সালে যখন আমাকে নৌ পরিবহন মন্ত্রী করা হয়। তখন আমাদের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ আমার সম্পর্কে একটা মন্তব্য করেছিলেন যার হাতে সড়ক পরিবহন জিম্মি তাকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নৌ পরিবহনের।’

চার বছর পর তার সঙ্গে এক টক শোতে দেখা হয়, তখন তাকে বলেছিলাম আপনার কী ভুল ভেঙেছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় আগের সেই পরিবেশ পরিস্থিতিতে নেই। দুর্ঘটনা কমে এসেছে, গত সাড়ে ৪ বছরে একটা লঞ্চ ডুবিও হয় নাই। আর আগে প্রতিবছর একটা দুই লঞ্চ দুর্ঘটনা হতই, কিন্তু সাড়ে ৪ বছরে একটিও হয়নি। অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ সেদিন এই কথার উত্তর দেইনি। আমি মনেকরি ফখরুল ইমামকে আবার একদিন এখানে দাঁড়িয়ে বলতে হবে তার মন্তব্য কতবড় ভুল এবং ভ্রান্ত, উদ্দেশ্য প্রণোদিত।’

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন সড়ক পরিবহন সেক্টর অত্যন্ত বিশৃঙ্খলা অবস্থায় ছিল এখন তার চেয়ে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। আমি এই সেক্টরে ১৯৭২ সাল থেকে শ্রমিক রাজনীতি করি। শ্রমিকদের পক্ষে কথা বললে অনেকের গায়ে লাগতে পারে।’

এসময় তিনি সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংক এবং ইউনিসেফ এর প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, ‘তারা ১৯২ টি দেশের উপর প্রতিবেদন করেছে। সেই প্রতিবেদনে ২০১১ সালে আমাদের অবস্থান ছিল ৯০তম তখন দুর্ঘটনার হার ছিল ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আর তিন বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালে সেই হার কমে এসেছে, তখন দুর্ঘটনার হার ছিল ১২ দশমিক ৬ শতাংশ আমাদের দেশের অবস্থান ১০৯তম। কাজেই যারা বলেন দুর্ঘটনা বেড়েছে কথাটি সঠিক না।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৬ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২০০২ সালে ৪ হাজার ৯১৮ টি দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৩৯৮ জন নিহত হয়েছিল। আর শেখ হাসিনার শাসনামলে ২০১৫ সালে ২ হাজার ৩৯৩টি দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৩৭৬ জন নিহত হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘এরশাদের আমলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে অনেক সুপারিশমালা ছিল একটিও বাস্তবায়ন হয়নি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে যেসকল সুপারিশ করা হয়েছিল তার অনেকাংশেই বাস্তবায়িত হয়েছে।’

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনা হ্রাস করার জন্য দুর্ঘটনা বন্ধ হয়ে যাবে এই কথা যদি কেউ বলে সেটা হবে বিভ্রান্তি। পৃথিবীর কোনো দেশ নেই। যেই দেশে কম বেশি দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। আমাদের সময় দুর্ঘটনা কমেছে, দুর্ঘটনা আরও কমিয়ে আনতে হবে। সেজন্য যে কাজটি করতে হবে সেখানে শতাধিক প্রতিনিধি তাদের উপস্থিতি সভাটা হয়, সেখানে আমার নাম প্রস্তাব করা হলে কেউ তো প্রতিবাদ করেনি। কেন করে নাই আমি একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলাম। আগে ট্রাকের সামনে দুই সিট পর্যন্ত বাম্পার ছিল তারপর ছিল হুক। এখন কোনো ট্রাকে বাম্পার আছে? এটাও আমাদের সুপারিশ ছিল।’

শাজাহান খান বলেন, ‘২০১৩ সালে গার্মেন্টস নিয়ে যখন জ্বালাও পোড়াও হচ্ছিলো তখন প্রধানমন্ত্রী আমাকে দায়িত্ব দেন। আমি তখন শ্রমিকদের সংগঠিত করে কাজ করেছি। এর ফলে ২০১৩ সালের পর গার্মেন্টস সেক্টরেও বড় ধরণের কোন জ্বালাও পোড়াও হয়নি।’

‘আরিচা রোডে সমাজকল্যাণ সচিব সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন। সে রিপোর্ট আমার কাছে আছে। ওই দুর্ঘটনায় চালক দায়ী নয়। তাহলে এই দুর্ঘটনার দায়িত্ব কার হবে। এরপরও যদি ওই চালককে দায়ী করা হয় এটা ঠিক নয়।’

শাজাহান খান বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা নেব। এতে দুর্ঘটনা আরও কমে যাবে। আমি ফখরুল ইমামকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর