সংসদে সরকারের কড়া সমালোচনায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী

, সংসদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 05:51:07

সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের কড়া সমালোচনা করলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের দায়িত্বশীলতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এজন্য রাষ্ট্রপতির ভাষণকে পূর্ণাঙ্গ ভাষণ মানতে নারাজ তিনি।

সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য নানা বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি দশম সংসদের শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, 'এই সরকারের অর্জন আছে, সাফল্য আছে। রাষ্ট্রপতির ভাষণে শুধু অর্জন এবং সাফল্য সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে এখনো অনেক সমস্যা, যে সমস্যার কারণের মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে, কষ্ট পাচ্ছে। বিষয়টা থাকলে ভাষণটা পূর্ণাঙ্গ হত।'

ভূমিমন্ত্রীকে খোঁচা দিয়ে বলেন, 'জাতীয় পার্টি এখন গণতান্ত্রিক দল, বিরোধী দলে আছে। কিন্তু যখন সরকারে ছিল তখন স্বৈরাচারী দল। আমরা যখন বিরোধী দলে তখন গণতান্ত্রিক। আর যখন সরকারে ছিলাম তখন স্বৈরাচার। যখন যার সঙ্গে সম্পর্ক থাকে ভাল লাগে, যখন সম্পর্ক থাকে না তখন কেউ স্বৈরাচার হয়ে যায়। কেউ স্বৈরশাসক হয়ে যায়।'

নিজেদের দল জাতীয় পার্টি নিয়ে বিভিন্ন জনের সমালোচনার জবাব দিতে যেয়ে গাধার গল্প শোনান। তিনি বলেন, 'যখন সরকারে ছিলাম, বিরোধী দলেও ছিলাম, অনেক অভিযোগ করত আমরা নাকি গৃহ পালিত বিরোধী দল। আজ যখন আমাদের নেতা বললেন বিরোধী এবার সরকারে নয়, বিরোধী দলে থাকতে চাই। তাও বলে আমরা নাকি গৃহপালিত বিরোধী দল, আমরা যাব কোথায়? আসলে নির্বাচনে পরাজিত হয়ে তারা আসতে পারেনি বলেই তারা এসব কথা বলছেন।'

রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'ঢাকা শহরে এক থেকে দেড় কোটি লোক বাস করে। সরকারি কর্মচারী-সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বেরে হয়েই কোথায় যাবে? তাদের জন্য গণ পরিবহন নেই। মানুষ টিকিট কিনে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাবে কিন্তু পাবলিক ট্রান্সপোর্টের অভাব।'

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, 'এই নিয়ে ৩ বার একই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আছেন, অথচ ঢাকায় শহরে মানুষের গণ পরিবহণের একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থা করতে পারলেন না।'

তিনি পুরনো গাড়ি ঢাকার বাইরে পাঠিয়ে নতুন গাড়ির নামানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে মন্ত্রী নতুন কমিটি করেছেন। কমিটি করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। আসলে দায় নিয়ে যে কাজটা করার প্রয়োজন সেই কাজ মন্ত্রী করছেন না।'

তিনি বলেন, 'সারাদেশে যানবাহনের সংখ্যা ৩৮ লাখ, আর চালক আছে ২০ লাখ। তাহলে ১৮ লাখ গাড়ি কিভাবে, কে চালান? ফিটনেসবিহীন গাড়ি ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৭৩০। রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলে দেখার কেউ নেই, বলার কেউ নেই। ৪৭ শতাংশ চালক ভুয়া লাইসেন্স দিয়ে গাড়ি চালায়। প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা ২০১৬ থেকে ২৪ হাজারের উপরে। আসলে দায়িত্ব নিয়ে কাজ না করলে যা হয়। ৭০ ভাগ চালক চোখের সমস্যায় ভুগছে। যে সকল চালকের চোখে সমস্যা তাদের দিয়ে গাড়ি চালানো হলে দুর্ঘটনা হবে না কেন? মন্ত্রী বেবি টেক্সির কাগজ দেখতে যান, গাড়ির কাগজ দেখতে যান। এটা মন্ত্রীকে দেখতে হবে কেন? এগুলো দেখার অনেক মানুষ আছে।'

ব্যাংক খাতের সমালোচনা করে বলেন, 'অর্থনীতির রক্তক্ষরণের নাম ব্যাংক। দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা ভাল নেই। ব্যাংক খাতকে যদি একটি দেশের অর্থের হৃদপিণ্ড ধরা হয়। তাহলে সেখানে রক্তক্ষরণ ঘটছে অনেক দিন ধরে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন ব্যাংক খাতে দুর্নীতি ক্যান্সারের মত একবার দেখা দিলে তা ছড়িয়ে পরে গোটা অর্থনীতিতে। ২০০৯ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। ২০১৮ তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। গত ৬ বছরের ৯ টি নতুন ব্যাংকে খেলাপি ঋণ হয়ে ৪ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ঋণ খেলাপি সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক জনতা, সোনালী ব্যাংক।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রতি বছর চাকরির বাজারে ১৮-২০ লাখ নতুন চাকরি প্রত্যাশী আসছে। আমরা দেশ-বিদেশে ১০-১৩ লাখ কর্মসংস্থান করতে পারি। তারপরেও প্রতি বছর ৮ লাখ বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান করতে পারি না।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর