আমি রাজনৈতিক কারাগারে ছিলাম: সুলতান মনসুর

, সংসদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 22:03:57

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেছেন, 'আজকে আমারও কিন্তু ওইখানে (সরকারি দলের সারিতে) থাকার কথা ছিল। যদি ওই জোটের পক্ষ হয়ে রাজনীতি করতাম। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, রাজনীতির ছন্দপতনের কারণে হয়তো আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় আমি একটি রাজনৈতিক কারাগারের মধ্যে ছিলাম। গত ১৮ বছরে যদিও আমি এমপি ছিলাম না বা এইখানে ছিলাম না তবে আমি রাজনৈতিকভাবে চিন্তার দিক দিয়ে নিষ্ক্রিয় ছিলাম না।'

বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) রাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ওপর অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বেলা ১১টায় তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। যদিও শপথ গ্রহণের কারণে তাকে গণফোরাম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

সুলতান মনসুর বলেন, 'আজ ঐতিহাসিক দিবস, অর্থাৎ ৭ই মার্চ। আজ থেকে ৪১ বছর আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, গোপালগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ নিয়ে সাড়ে ৬ কোটির মানুষের যে বাংলাদেশ সেই বাঙালিকে যিনি ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন তার নাম হচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। সেদিনকার বঙ্গবন্ধুর সেই ৭ই মার্চের ভাষণের কারণে আজকে আমি মহান জাতীয় সংসদে শপথ গ্রহণ করেছি।'

তিনি বলেন, 'এখানে যারা আছেন সকল সংসদ সদস্য, আমার শ্রদ্ধেয় নেতাও রয়েছেন। সহকর্মী আছেন। আমার কর্মীও আছেন। আমার ভাই বোনেরা আছেন। আমার নেত্রীও আছেন, অর্থাৎ সংসদ নেত্রী আছেন। যার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ হয়েছিলো। তবে অপ্রিয় হলেও সত্য আজকে সংসদে যারা আছেন তারা এক জোটের পক্ষ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। আমিই বোধহয় একজন নীলমণি যে বর্তমানে আপাতত জোটের বাইরে অন্য জোট থেকে নির্বাচিত হয়েছি। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও আমি সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসনের কুলাউড়া মানুষের স্বতঃ:স্ফূর্ত সমর্থনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে এখানে এসেছি। সরকার প্রধান হিসেবে আজকে সংসদ নেত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।'

তিনি বলেন, 'একাদশ সংসদ নির্বাচনে অন্তত আমার নির্বাচনী এলাকায় কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অন্য এলাকায় কি ঘটেছে জানি না। অন্যরা তাদের বিবেকের আদালতে তারাই বলতে পারবেন।'

সুলতান মনসুর বলেন, 'আজকে আমারও কিন্তু ওইখানে থাকার কথা ছিল। অর্থাৎ যদি ওই জোটের পক্ষ হয়ে রাজনীতি করতাম। আজ থেকে ১৮ বছর আগে এই সংসদে আমার আসার সুযোগ হয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, রাজনীতির ছন্দপতনের কারণে হয়তো আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় আমি একটি রাজনৈতিক কারাগারের মধ্যে ছিলাম। গত ১৮ বছরে যদিও আমি এমপি ছিলাম না বা এইখানে ছিলাম না তবে আমি রাজনৈতিকভাবে চিন্তার দিক দিয়ে নিষ্ক্রিয় ছিলাম না। আর যে বিশ্বাস নিয়ে আজ ৭ই মার্চ যাকে নিয়ে আলোচনা ১৯৬৭-৬৮ সালে স্কুল ছাত্র থাকা অবস্থায় যাকে ঘিরে, যার স্লোগান দিয়ে রাজনীতি জীবন শুরু করেছিলাম-পদ্মা,মেঘনা যমুনা তোমার আমার ঠিকানা, জেলের তালা ভাঙবো শেখ মুজিবকে আনবো, মিথ্যা অসত্য ষড়যন্ত্রমূলক মামলা মানি না মানবো না। সেই জায়গা থেকে সেই বিশ্বাস থেকে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিচ্যুত হয়নি। যদিও জোটগতভাবে বা রাজনৈতিকভাবে বর্তমানে হয়তো আমার নেতাদের সঙ্গে ওই জোটে নাই। কিন্তু আজ থেকে ৫২ বছর আগে যে বিশ্বাস নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছিলাম, সেই বিশ্বাসের জায়গা থেকেই আমি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে নির্বাচন করে আপনাদের সকলের দোয়াতে এই জাতীয় সংসদে এসেছি।'

তিনি বলেন, 'মহাজোটের বিরোধী যারা ছিলো তারাও আমাকে ভোট দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অনুসারীরা, জাতির পিতার অনুসারীরাও আমাকে ভোট দিয়ে সর্বস্তরের জনগণ আমাকে এখানে পাঠিয়েছে। কারণ আমার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিলো বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে। আমি নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করি। আমি নিজেকে আজকে এইভাবে সম্মানিত বোধ করি-জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন সেই ৭ই মার্চে শপথ নিতে পেরেছি।'

সংসদে সুলতান মনসুর বলেন, 'অনেকের মনোঃপুত বক্তব্য হয়তো আমি আজকে না রাখতে পারি। তবে আশা করবো আপনার (স্পিকার) কাছে মহাজোটের বিরোধী একজন অন্য জোটের ব্যক্তি হয়ে যাতে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারি, জনগণের কথা বলতে পারি, বাংলার মানুষের কথা বলতে পারি, সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলতে পারি। এবং বঙ্গবন্ধু যে কথা বলেছেন যে জনগণই ক্ষমতার উৎস সেই জনগণের স্বার্থে কথা বলে যাতে সারাজীবন রাজনীতি করতে পারি সেই শেল্টার পাবো বলে আশা করি। সেই সহযোগিতা পাবো বলে আশা করি। এমনকি সংসদ নেত্রীও সেই বিষয়টি বিবেচনায় রাখবেন বলে মনে করি।'

তিনি আরও বলেন, 'এখানে ৯৯ পার্সেন্ট হচ্ছে এক জোটে আর আমি অন্য জোট থেকে এসে রাজনীতি করছি। তবে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু এই প্রশ্নে কোন আপোষ নেই। বাংলাদেশ জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু এক নামে পরিচিত। সংসদ নেত্রী বলেছেন, জাতীয় ঐক্যের কথা। আজ সেই ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।'

প্রায় সাড়ে ১১ মিনিটের বক্তব্য শেষ করেন জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলে শেষ করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর