সন্ত্রাস-যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে সংসদে প্রস্তাব পাস

, সংসদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 19:19:34

নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায় হামলা, ফেনীর নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যাসহ সন্ত্রাসী ও যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব সংসদ, সরকার ও নাগকিরদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে সংসদে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে।

এ বিষয়ে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্যরা বলেছেন, ধর্মের নামে বিশ্বে রক্তের হোলিখেলা চলছে। বাংলাদেশেও সামাজিক অবক্ষয় ঘটিয়ে সরকারের ব্যাপক অর্জনকে ম্লান করার ষড়যন্ত্র চলছে। কঠোর আইন করে জঙ্গিবাদসহ যৌন নিপীড়ক ও সামাজিক অবক্ষয়ের সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসিসহ কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে এসব বন্ধ হবে না।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) রাতে প্রায় চার ঘণ্টা সাধারণ আলোচনা শেষে কণ্ঠভোটে প্রস্তাবটি পাস করা হয়। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারি দল, বিরোধী দল, গণফোরাম ও বিএনপি’র সংসদ সদস্যরা এই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেন।

আলোচনায় অংশ নেন সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, মোহাম্মদ নাসিম, মতিয়া চৌধুরী, শাজাহান খান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ, জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মশিউর রহমান রাঙ্গা, ফখরুল ইমাম, বিএনপি’র হারুনুর রশিদ, সরকারি দলের মেহের আফরোজ চুমকি প্রমুখ।

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইষ্টাচার্চের মসজিদ, শ্রীলংকার গীর্জা ও হোটেলে সন্ত্রাসী হামলা, ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এসব সন্ত্রাস ও যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব সংসদ, সরকার ও নাগরিকদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে প্রস্তাব আনেন সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

১৪৪ (১) বিধিতে আনীত প্রস্তাবে বলা হয়- ’বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদ ও শ্রীলঙ্কায় গীর্জা, হোটেলে সন্ত্রাসী হামলায় সংসদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপির নাতি জায়ান চৌধুরীসহ বিপুল সংখ্যক মানুষকে হত্যা ও আহত করা এবং ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসা ছাত্রী নুসরাতকে যৌন নিপীড়ন ও পুড়িয়ে মারার ঘটনায় গভীর ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে এবং এ সকল সন্ত্রাস যৌন নিপীড়নের ঘটনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল দেশের সংসদ, সরকার ও নাগরিকদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানাচ্ছে।’

তোফায়েল আহমেদ বলেন, শুধু শ্রীলঙ্কা নয়, সারাবিশ্ব আজ আক্রান্ত। গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গেছেন। বিএনপি-জামায়াত আমলে এদেশে জঙ্গিবাদের সৃষ্টি হয়েছিল। হলি আর্টিজানের ঘটনার পরে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। পৃথিবীতে প্রায় আট বিলিয়ন জনসংখ্যা। আমরা যারা মুসলিম দেশের নাগরিক, তাদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি হয়েছে। কারা এই জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস, তালেবান, আল-কায়দা সৃষ্টি করেছে? আন্তর্জাতিক বিশ্ব এখন একটা অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। কিন্তু শান্তির দেশ বাংলাদেশ, আমরা সকল সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, নুসরাতকে পুড়িয়ে মারতে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ নির্দেশ দিয়েছে। শিক্ষকরা হলেন বাবার মতো। ছাত্ররাও শিক্ষকদের পিতার মতো শ্রদ্ধা করতো। কোথায় সেই দিন হারিয়ে গেছে? নুসরাত ঘটনার পরও অনেক জায়গায় শিশুরা নির্যাতনের শিকার কীভাবে হয়? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এতো বিশাল উন্নয়নকে আমরা ম্লান করে দিতে পারি না। যারা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত, দ্রুত বিচারের মাধ্যমে এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এমন একটা আইন করতে হবে, যাতে এক বা দেড় মাসের মধ্যে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। বাংলাদেশের ভেতরেও ষড়যন্ত্র চলছে। সরকারের উন্নয়নকে ম্লান করার জন্য দেশে এসব অপকর্ম ঘটানো হচ্ছে। সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে জড়িতদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা গেলে এসব বন্ধ হবে।

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ধর্মের নামে পুরো বিশ্বে যেন রক্তের হোলি খেলা শুরু হয়েছে। ধর্মের নামে একে অপর জনকে পুড়িয়ে হত্যা করছে, গুলি ও বোমা মেরে হত্যা করছে। নিউজিল্যান্ডে এক নরঘাতক অসংখ্য নামাজ আদায়রত মুসলমানদের হত্যা করেছে। শান্তির দেশ শ্রীলঙ্কায় ইস্টার সানডেতে বোমা মেরে শত শত মানুষকে হত্যা করা হলো। শিশু জায়ানের ছবি দেখে গোটা দেশের মানুষ ব্যথিত হয়েছে। এসব জঙ্গিরা কোন বেহেশতের স্বপ্ন দেখে? জঙ্গির লাশ মা-বাবারা নেয় না। ধর্মের নামে একজন মুসলমান খ্রিস্টানকে হত্যা করছে, একজন খ্রিষ্টান মুসলমানদের হত্যা করছে, বৌদ্ধরা মিয়ানমারে লাখ লাখ মুসলমানকে নির্যাতন করে দেশ ছাড়া করেছে। ধর্মের নামে সারাবিশ্বে মনুষ্যত্ব ও মানবিকতাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে বিশ্বকে রুখে দাঁড়াতে হবে। নুসরাতকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হলো। কোনো কালক্ষেপণ নেই, সমস্ত খুনি, যৌন নিপীড়কদের দ্রুত বিচার করে সবাইকে ফাঁসি দিতে হবে। ধর্ষক, জঙ্গিদের বিচার অতীতের মতো করতে পারলে সামাজিক অবক্ষয় অবশ্যই বন্ধ হবে।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশ আজ নিরাপদ নয়। নিরাপদ করতে হলে বৈশ্বিক সহযোগিতা অবশ্যই প্রয়োজন। শ্রীলঙ্কায় জায়ানসহ ৪৫ জন শিশু ধর্মের নামে হিংসার বলি হলো। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-ইহুদি কেউই এ হিংসা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহারের ফলেই সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী আক্রমনের ঘটনা ঘটে। নুসরাত হত্যা কেবল একটি সাধারণ অপরাধের ঘটনা নয়। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে দৃষ্টিভঙ্গি যেখানে নারী ভোগের বস্তু। এসব বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা ইউটিউবে ধর্ম বিদ্বেষ ছড়ায়, নারীর নামে অশ্লীল বক্তব্য দেয়, তাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে আনুন। নারী সুরক্ষা আইনকে জোরদার করুন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর