মামলাজট নিরসনে প্রচলিত আইনের সংস্কার জরুরি বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, মামলার জট নিরসনে প্রচলিত আইনের সংস্কার অনেক ক্ষেত্রে জরুরি এবং আইনের সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রচলিত আইনকে যুগোপযোগীকরণে আইন সংশোধন করা বা বাস্তবতার নিরিখে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়ে থাকে।
মঙ্গলবার (১৮ জুন) বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য মো. হাবিবর রহমানের তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, একটি আইনের সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার জড়িত থাকে। সবার মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনে আইন সংশোধন বা নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়। ইতোমধ্যে বেশকিছু আইনের সংস্কার করা হয়েছে এবং আরো কিছু আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সাতটি সাইবার ট্রাইব্যুনাল, ১২২টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ১৫৯টি যুগ্ম জেলা জজ আদালত, ১৯টি পরিবেশ আদালত, ৬টি পরিবেশ আপিল আদালত, ৩৪৬টি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের পদ সৃষ্টির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে সংসদে জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি জানান, বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে বিচারকাজ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও এজলাস সংকট নিরসনে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিচারকাজে গতিশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারের বিশেষ উদ্যোগে বিভিন্ন পর্যায়ের বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনকে গতিশীল করা হয়েছে যাতে শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া যায়। এ লক্ষ্যে ২০১৪-১৮ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৬ জন ও হাইকোর্ট বিভাগে ২৮ জন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনকে গতিশীল করা হয়েছে যাতে অধস্তন আদালতে শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া যায়। ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত অধস্তন আদালতে মোট ৫৭১ জন সহকারী জজ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও ৯৯ জন সহকারী জজ নিয়োগের কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আরো ১০০ জন সহকারী জন নিয়োগের জন্য জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন বরাবর চাহিদাপত্রও পাঠানো হয়েছে। সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সারাদেশে আরো ৪১টি ট্রাইব্যুনাল সৃষ্টি হয়েছে। নতুন এসব ট্রাইব্যুনালসহ মোট ৯৫টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর অধীন দায়েরকৃত মামলাসমূহ নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। তাছাড়া ৭টি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সৃজন করা হয়েছে যার মাধ্যমে সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর অধীনে দায়েরকৃত মামলা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। এই ট্রাইব্যুনালের জন্য ২৪০টি সহায়ক কর্মচারীর পদও সৃষ্টি করা হয়েছে বলে জানান আইনমন্ত্রী।
বেগম হাবিবা রহমানের আরেক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী জানান, গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত, নিম্ন আদালত হতে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত অর্থাৎ দেশের আদালতসমূহে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৫ লাখ ৮২ হাজার ৩৪৭টি। এর মধ্যে আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ২১ হাজার ৮১৩টি। হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৫ লাখ ৬ হাজার ৬৬৪টি।
হাজী মো. সেলিমের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী জানান, দেশের পারিবারিক আদালতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত মোট বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৫৯ হাজার ৮৬০টি। জেলা ভিত্তিক দেওয়া হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সর্বাধিক বিচারাধীন মামলা ঢাকা জেলায়- ৫ হাজার ৫০৯টি। বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে কোনো মামলা বিচারাধীন নেই।
নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, নিবন্ধন অধিদপ্তরে কর্মরত সাব-রেজিস্ট্রারদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে বিগত ১০ বছরে এ অপরাধে কাউকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি। কারণ অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চাকরি বহাল রাখা হয়েছে।