বিএনপি নেতাদের চোর বললেন খাদ্যমন্ত্রী

, সংসদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা, জাতীয় সংসদ ভবন থেকে | 2023-08-25 09:32:35

সরকারের সমালোচনাকারী বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ‘মানুষ বুঝে গেছে, আপনারা চোর ছিলেন। যার কারণে আপনারা দৌড়ে পালিয়েছেন। আজ আন্দোলন করতে পারেন না, মাঠে নামতে পারেন না। মাঠে নামার শক্তি নেই।’

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

সংসদে শপথ নিয়ে আবার সেই সংসদকে অবৈধ বলায় বিএনপি নেতাদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়লেন তিনি। এর আগে বিকেল ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দিনের কার্যসূচি শুরু হয়।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যারা কৃষককে বীজ দেননি, তেল দেননি, তারাই আবার বলেন, এই সরকার অবৈধ। স্পিকারের কাছে শপথ নিয়ে, এই সংসদে এসে যে বক্তব্য দেন, তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই (এসময় একটি গল্প শোনান খাদ্যমন্ত্রী)-একদিন এক চোর সারারাত চুরি করে নদীর ঘাটে স্নান করতে গেছেন, আর এক দরবেশ সারারাত ইবাদত করে নদীর ঘাটে স্নান করতে গেছেন। ওই সময় দরবেশ মনে করছেন, তিনি তার মতই হয়তো সারারাত ইবাদত করেছেন, আর চোর মনে করছেন, তার মতই মনে হয় সারারাত চুরি করেছেন। এমন সময় পুলিশ ওইখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। পুলিশ দেখে চোর দিয়েছে দৌড়, তখন মানুষ বলে, দৌঁড়াচ্ছে কেন? তখন দরবেশ চিনলেন যে ওই লোক চোর, আর মানুষ চিনল যে তিনি দরবেশ।’

‘আপনারা এই সরকারকে অবৈধ বলেন, এই সংসদে বক্তব্য দেন, নিজের জন্য প্লট চান, নিজের এলাকার উন্নয়ন চান, আবার এই সংসদকে অবৈধ বলেন, বাজে কথা বলেন। মানুষ বুঝে গেছে আপনার চোর ছিলেন, যার জন্য দৌড়ে পালিয়েছেন, যার জন্য আন্দোলন করতে পারেন না, মাঠে নামতে পারেন না। মাঠে নামার শক্তি নেই,’ যোগ করেন মন্ত্রী।

সম্প্রতি ধানের দাম নিয়ে কৃষকের প্রতিবাদের ব্যাখা দিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে মোট চাল উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৫৬ লাখ মেট্রিক টন। আর আমাদের ধারণ ক্ষমতা ২ কোটি ৭৮ লাখ মেট্রিক টন। মানুষ মনে করে, সকাল থেকে ঘুমানো পর্যন্ত যা খায় সবই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায়, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। আসলে তা নয়। আমরা শুধুমাত্র রেশনিংয়ের জন্য বিশেষ করে, পুলিশ, সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশসহ (বিজিবি) বিভিন্ন সেক্টরে যে রেশন দেওয়া হয় সে পরিমাণ খাদ্য কিনতে পারি। এছাড়া আপদকালীন দুর্যোগের জন্য ১০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য কেনার বিধান রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এক সময় এই দেশে কৃষক খাদ্য শস্য উৎপাদনের জন্য হাহাকার করত। জমিতে ১০ মণ ১২ মণের বেশি ধান হতো না। ধানের বিড়ম্বনায় পড়েছিল। ২০১৭ সালে হাওরে যখন ধান ডুবে যায় তখন ২৯টি জেলায় ধান পোকায় খেয়ে ফেলে। ২০১৭ সালে হঠাৎ করে খাদ্য শস্য কমে যায়। তখন তড়িঘড়ি করে ট্যাক্স তুলে দিয়ে খাদ্য আমদানি করা হয়। তারপরের বছরই অর্থাৎ ইরিতে বাম্পার ফলন, আমনে বাম্পার ফলন। এবার অতিরিক্ত বাম্পার ফলন। এসব বাম্পার ফলনের কারণে এবং শ্রমিকের পারিশ্রমিক বেড়ে যাওয়ায় ধান কাটার লোক পাওয়া যায় না। আগে যেখানে ৩০০ টাকায় শ্রমিক পাওয়া যেত, এখন ৭০০, ৮০০ টাকায় শ্রমিক নিতে হয়। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের কষ্ট হয়েছে। আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। পরে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। তাৎক্ষণিকভাবে আগে থেকে দেড় লাখ মেট্রিক টন ধান, ১০ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং দেড় লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত হয়।’

‘এজন্য কৃষি নির্বাহী কর্মকর্তাদের দিয়ে প্রান্তিক চাষিদের তালিকা করে ধান সংগ্রহ শুরু করি এবং ধান কেনা অব্যাহত রেখেছি। আরও চাঙ্গা করার জন্য আড়াই লাখ মেট্রিক টন ধান প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই কাজগুলো অবাহত থাকলে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাবে। তবে এটা স্থায়ী সমাধন নয়। স্থায়ী সমাধান করতে হলে উৎপাদন ব্যয় কমাতে হবে, ধান কাটার জন্য যান্ত্রিক পদ্ধতিতে যেতে হবে। বিদ্যুতে ভর্তুকি কৃষকরা পায় না। সেটা সেচ যন্ত্রের মালিকরা পায়। কাজেই নতুন করে ভাবতে হবে,’ যোগ করেন খাদ্যমন্ত্রী।

এ সম্পর্কিত আরও খবর