ন্যাম ভবনের বাসায় কত মধু?

, সংসদ

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-09-01 21:24:23

সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পর সকলের জন্য আবাসন নিশ্চিত করা হয় সরকারের পক্ষে। সংসদ সচিবালয় থেকে প্রত্যেক এমপির জন্য নাখালপাড়া ও মানিকমিয়া এভিনিউয়ে অবস্থিতি ন্যাম ভবনে থাকার বন্দোবস্ত করা হয়। এমপিদের চাহিদার ভিত্তিতে সংসদ সচিবালয় এই বাসা বরাদ্দ দিয়ে থাকেন। যতদিন তিনি সংসদ সদস্য থাকবেন ততদিন পরিবার নিয়ে ওই বাসাতেই থাকবেন। তবে কেউ যদি বাসা বরাদ্দ না নেন তাতেও কোন আপত্তি নেই সংসদ সচিবালয়ের।

আর যখন সংসদ সদস্যগণ মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়ে যান তখন তাদের ঠিকানা হয় মন্ত্রিপাড়ায়। মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া এমপিগণ তাদের পূর্বের বাসা ছেড়ে উঠবেন মন্ত্রী হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া নতুন বাসায়। দশম সংসদের অনেক সদস্যই একাদশ সংসদেরও সদস্য। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের দলীয় এমপিরা। একাদশ সংসদ গঠনের পর মন্ত্রিসভায় যাদের নাম উঠেছে ন্যাম ভবনে তাদের নামে পূর্বের বরাদ্দকৃত বাসা ছেড়ে দেওয়ার কথা। সরকার গঠনের ৭ মাস হতে চলল এখনো ন্যাম ভবনের বাসা দখলে রেখেছেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী।

সংসদ সচিবালয় থেকে বাসা ছাড়ার জন্য কয়েক দফা নোটিশ দিয়েও কাজে আসেনি। তাই শেষ পর্যন্ত অভিযোগ গেছে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। সদ্য শেষ হওয়া তৃতীয় অধিবেশনের শেষ দিন ১১ জুলাই সংসদ ভবনের নবম তলায় সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় নাম উল্লেখ না করে ন্যাম ভবনে বাসা দখল করে থাকা মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীদের ভৎসনা করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সভায় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী ওইসকল মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “ন্যাম ভবনের বাসা যদি এতই ভাল লাগে তাহলে মন্ত্রিপাড়ার বাসা ছেড়ে দিন, এখানে চলে আসুন। আর আপনাদের বাসা দেওয়া হয়েছে। আপনাদের ড্রাইভার, পিয়ন, আত্মীয় থাকার জন্য না। বাসায় যারা থাকেন না তারা বাসা ছেড়ে দেন।”  

ওইদিনের সভার পর অনুসন্ধান করে দেখা গেছে ২ মন্ত্রী, ৪ প্রতিমন্ত্রী ও এক উপমন্ত্রী ন্যাম ভবনের বাসা দখলে রেখেই মন্ত্রিপাড়ার বাসাতে থাকছেন। তাদের মধ্যে দুইজন আবার সেদিনের পর ন্যাম ভবনের বাসা ছেড়ে গেলেও সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বুঝিয়ে না দিয়েই চলে গেছেন। যে কারণে ওই দুইজনের বাসা এখনো তাদের দখলে রয়েছে মর্মে কাগজে রয়েছে। এ নিয়ে সংসদ সচিবালয়ে কথা উঠেছে ন্যাম ভবনের বাসায় কত মধু যে মন্ত্রিপাড়ার বাসা পাওয়ার পরেও তারা বাসা ছাড়ছে না। অনেকে আবার বলছেন আমি থাকব দেখি কি হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ন্যাম ভবনের বাসায় আসলে ওই মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীদের মধ্যে অনেকেই থাকেন না, কেউ কেউ মাঝে মাঝে দুই একদিন আসেন, আবার চলে যান। ওই বাসায় মূলত তাদের আত্মীয়রা থাকেন।

মন্ত্রিপাড়ার বাসা থাকা সত্ত্বেও ন্যাম ভবনের বাসা দখলে থাকা মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন-কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নূরুজ্জামান আহমেদ, সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান, এর বাইরে নবনিযুক্ত নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা তার নামে ন্যাম ভবনে বরাদ্দকৃত বাসা এখনো তিনি বুঝে নেননি। যেহেতু প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন তাই সেই বাসায় আর হয়ত উঠবেন না।

এদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী ন্যাম ভবনের বাসায় নিজে থাকেন না। তাদের আত্মীয়রা ওই বাসায় থাকেন। আর নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী দুই দিন আগে ন্যাম ভবনের বাসা ছেড়ে গেলেও এখনো তারা সংসদ সচিবালয়কে তাদের সেই বাসা বুঝিয়ে দেননি। আর সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী দেখতে চান শেষ পর্যন্ত কি হয়।

অন্যদিকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার ন্যাম ভবনের বাসাতেই থাকার ইচ্ছে পোষণ করেছেন। আর স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যও তার ন্যাম ভবনের বাসাতে মাঝে মাঝে আসেন, অন্য সময় খালিই থাকে।

এ বিষয়ে হুইপ শামসুল হক চৌধুরী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, সংসদ নেতার নির্দেশে আমরা ওইসকল মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী বা সংসদ সদস্যদের নোটিশ করব, আগেও করিছি, এবার চূড়ান্ত নোটিশ। মন্ত্রীদের মধ্যে যারা বাসা ছাড়বেন না তাদের কাছ থেকে ভাড়া কেটে রাখা হবে। আশা করছি, তারা বাসা ছেড়ে দেবেন।  

এ সম্পর্কিত আরও খবর